ভোলায় হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে

178

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : জেলার উপজেলা সদরে হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। হোগলা পাতা রোদে শুকিয়ে চিকন করে তার অংশ ছিড়ে হাতে পাকিয়ে তৈরি হচ্ছে চমৎকার সূতলি বা দড়ি। স্থানীয় পাইকাররা বাড়িতে এসে এসব দড়ি কিনে ঢাকায় আরো বেশি দামে বিক্রি করছেন। সদরের চর সামাইয়া, ভেদুরিয়া, ছিপলী, ভেলুমিয়া, আলিনগর, বাপ্তা, রতনপুর, ইলিশা, শীবপুর, রাজাপুরসহ কয়েকটি গ্রামে কয়েক হাজার নারী এ হস্ত শিল্পের সাথে নিজেদের সমৃক্ত করে অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। একইসাথে পরিবারে বাড়তি উপার্জনে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে অনেকের। বহু নারী কঠোর পরিশ্রম করে ভাগ্য বদল করেছেন। বিশেষ এ দড়ি দিয়ে ঢাকায় চেয়ার, সোফা, মোড়া, পাপশ, শোপিসসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রতি হাজার হাত দড়ি পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। আর এতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ ঘন্টা। একজন নারী সংসারে কাজ শেষ করে মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার দড়ি বিক্রি করতে পারেন। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব হোগলা পাতা সংগ্রহ করা হয়। মূলত হোগলা পাতার সহজলোভ্যতার কারণে দড়ি বিক্রির প্রায় পুরোটাই লাভ হিসেবে থাকে। বাড়ির উঠানে নারীদের পাতা নিয়ে বস্ত’ থাকতে দেখা যায়। কেউ পাতা শুকাচ্ছেন, কেউ রোদে দিচ্ছে আবার কেউ হাতে পাকিয়ে দড়ি তৈরিতে মগ্ন।
সদর উপজেলার শীবপুর ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় রীতা বেগম ও সুফিয়া খাতুনের সাথে কথা হয়। তাদের দুজনের স্বামীই দীনমজুরের কাজ করে। ৩/৪ বছর হলো তারা দড়ি বানাচ্ছেন। তাদের এখানে অনেক নারীই অবসরে দড়ি বানিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি করেছেন। রীতা ও সুফিয়া বাসস’কে বলেন, সকাল থেকে সংসারের কাজ করে দুপুরের পরই সাধারণত তারা দড়ি বানাতে বসেন। দৈনিক একজনে ২’শ থেকে আড়াই’শ টাকার দড়ি বানাতে পারেন। অবশ্য সময় বেশি দিলে আরো বেশি কাজ করা যায় বলে জানান তারা।
একই এলাকার মিনারা বেগম বলেন, তাদের এ গ্রাম মেঘনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় প্রচুর হোগলা পাতা পাওয়া যায়। ফলে পাতা বয়ে আনতে পরিবহন খরচ লাগেনা। তাই তার লাভ বেশি হয়। তবে সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করতে পারলে তারা সঠিক মূল্য পেতেন বলে মনে করেন তিনি।
চরসামাইয়া ইউনিয়নের চরছিফলি গ্রামের জাহানারা বেগম, রাবেয়া বেগম, মরিয়ম বেগম ও লুৎফা নাহার বাসস’কে জানান, শীতের এ সময়টাই তাদের দড়ি বানানোর উৎকৃষ্ট সময়। কারণ বর্ষা বা অন্য সময়ে ঘরের বাইরে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর এখন উঠান ও এর আশপাশে প্রচুর স্থান পাওয়া যায়। তাই এখন তাদের প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়।
পাইকারি দড়ির ক্রেতা মো: জামাল হোসেন বাসস’কে বলেন, রাজধানী ঢাকাতে তাদের বেশ কয়েজন পার্টি রয়েছে,তাদের কাছে প্রতি হাজার হাত দড়ি ২৪০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। সেখান থেকে বিভিন্ন শোরুমে চলে যায় এসব দড়ি। ব্যবহার হয় হাতে তৈরি চেয়ার, সোফা, টেবিল, দোলনা ইত্যাদিতে।
চরসামইয়া ইউনিয়ন পরিষেদ চেয়ারম্যান মো: মহিউদ্দিন মাতাব্বর বাসস’কে বলেন, নারীদের দড়ি তৈরি করার উদ্যোগ একটি ভালো কাজ। আমার ইউনিয়নে প্রায় ৬’শ নারী রয়েছেন যারা দড়ি তৈরি করে বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে পল্লী অঞ্চলের নারীরা তাদের কর্ম যোগ্যতা প্রমাণ করছেন। তবে তাদের পারিশ্রমিকটা অনেক কম পড়ে যায়। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি।
ভোলা উদ্যেক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক মো: আরিফ হোসেন বাসস’কে জানান, এ অঞ্চলের নারীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও কর্মঠ। গ্রামীণ নারীদের হস্ত শিল্পের উপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ উদ্যেক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যাতে করে নারীরা নিজেরাই তাদের উৎপাদিত দড়ি দিয়ে বিভিন্ন কুটির শিল্পের বিভিন্ন আসবাব পত্র তৈরি করতে পারে। আর এতে করে নারীরা তাদের কাজের সঠিক মুজুরি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।