ব্যাপক নিরাপত্তায় ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে

553

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : ব্যাপক নিরাপত্তা, উৎসাহ উদ্দীপনা আর উৎসব আমেজে আজ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।
সকাল ৮টা থেকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিটানিং অফিসার আবুল কাশেম ও মো. আব্দুল বাতেন। বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জানান, নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে। ভোটাররা নির্ভিঘেœ ভোট দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কারও সহায়ক না, কারও পক্ষে বা বিপক্ষেও না। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে আইন অনুযায়ী কমিশন দায়িত্ব পালন করছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বাসসকে বলেন, ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোট কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
টানা ২০ দিন প্রচারণা শেষে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় সকল প্রকার প্রচারণা শেষ হয়েছে। ভোট উপলক্ষে রাজধানীতে ইতোমধ্যে মটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত নৌ চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে ইসি। এদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত রয়েছে এবং বিজিবি, র‌্যাব ও নৌ-পুলিশ নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন বাহিনী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভোটের দায়িত্বে নিজ নিজ সদস্যদের নির্দিষ্ট জায়গায় মোতায়েন করেছেন।
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ৬ জন অস্ত্রসহ পুলিশ (একজন এসআই, একজন এএসআই ও চারজন কনস্টেবল), ২ জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার এবং ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য (চারজন নারী ও ছয়জন পুরুষ) মোতায়েন রয়েছে। আর সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চারজন পুলিশ (এসআই/এএসআই ১ জন ও ৩ জন কনস্টেবল), ২ জন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার, ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এই হিসেবে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকছে আনসার ও পুলিশের ৪২ হাজার ৬৮২ জন সদস্য। আর ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ৭৫ প্লাটুন বিজিবির ২ হাজার ২৫০ জন জোয়ান নিয়োজিত রয়েছেন।
এছাড়া পুলিশ ও এপিবিএন সমন্বয়ে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪৩টি স্ট্রাইকিং টিম, র‌্যাবের ১২৯টি টিম নিয়োজিত রয়েছে। অর্থাৎ র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, স্ট্রাইকিং ও ভ্রাম্যমাণ টিম মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। সব মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৫০ হাজারের মতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন।
ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বাসসকে জানান, নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক যেখানে যেমন দরকার সে অনুযায়ী যেকোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে।
নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন ও অপরাধের বিচার কাজের জন্য দুই সিটিতে ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪ জন ও দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ জন নির্বাহী হাকিম ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। এছাড়া উত্তর সিটিতে ২৭ জন ও দক্ষিণে ৩৭ জন বিচারিক হাকিম ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশবাসী ও বিদেশিরা ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ নির্বাচনে মোট ২২ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ১৩ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক কাজ করছেন। এদের মধ্যে উত্তরে ৫০৩, দক্ষিণে ৪৫৭ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ৫৩ পর্যবেক্ষক পর্যবেক্ষণ করছেন। আর বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন মোট ৭৪জন। তাদের মধ্যে ৪৬ বিদেশী এবং ২৮ বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছেন।
ইসি সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ জন এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। উত্তরে মোট ভোটকেন্দ্রে ১ হাজার ৩১৮। মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সংখ্যা ১৮টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষ রয়েছে ৭৫৪টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৫০। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। এ ছাড়াও ভোটকক্ষের সংখ্যা রয়েছে ৮৭৬টি।