শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সব সূচকেই ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

302

সংসদ ভবন, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্য খাতের সব সূচকেই ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের সদস্য আ স ম ফিরোজ তা সমর্থন করেন।
গত ৯ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ ও বছরের প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারি দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মো. নাসির উদ্দিন, সলতানা নাদিরা, খন্দকার মমতা হেনা লাভলী, তাহমিনা বেগম, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন,জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১১ বছরে দেশের সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এ উন্নয়নের ফলে দেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হওয়ার পথে দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৯০৯ ডলারে পৌঁছেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭৪ বছর হয়েছে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি,দারিদ্রতা হ্রাস হয়েছে। সর্বোপরি দেশের কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তা আর আর কোন আমলে হয়নি। আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অনেক উন্নতি হয়েছে। যার ফলে স্বাস্থ্যের সব সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে সারা দেশে টিকা কার্যক্রমের ফলে মাতৃ-শিশু মৃত’্য হার অনেক কমে গেছে। এর স্বীকৃতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ থেকে পুরুস্কার দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এসব ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি ৩২ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে গ্রামের মানুষকে এখন আর বিনা চিচকিৎসায় রোগে ভুগতে হচ্ছে না। শুধু তাই নয় এখন জেলা হাসপাতালগুলোতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন করার গ্রামের মানুষকে আর ঢাকায় দোড়াতে হচ্ছে না। ইতোমরেধ্য ২ হাজার ডাক্তারের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নতুন ডাক্তার নিয়োগ করে উপজেলা পর্যায়ে পদায়ন করা হয়েছে। এখন আর উপজেলায় ডাক্তার স্বল্পতা নেই। জনগণ সুলভে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে।চলতি বছরের মধ্যে আরো সাড়ে ৫ হাজার ডাক্তার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া গত এক বছরে দেশের চিকিৎসা অবকাঠামো খাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রত্যক জেলা হাসপাতালকে আড়াইশ’ এবং উপজেলা হাসপাতাল পর্যায়ক্রমে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। বিভাগীয় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিসহ উন্নত ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস ঝুঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের সব বিমান, নৌসহ বিদেশ থেকে গমনাগমন করা হয় এমন সবধরণের যানবাহন টার্মিনালে স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। কোয়ারেনটাইন এরিয়া নির্ধারন করা করা হয়েছে। সর্বোপরি জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, মুজিববর্ষে জ্বালানি ও বিদ্যুতের গ্রাহক সেবা একশত ভাগে উন্নীত করা হবে। মুজিবর্ষে সবাই বিদ্যুতের আওতায় আসবে। সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিগত এগারো বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২২ হাজার ৭৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ হতে ৯৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া গভীর সমুদ্র বন্দরে গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে সার্ভে সম্পন্ন হলে বিদেশী কোম্পানীর মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জ্বালানি ও বিদুৎ খাতে ৮টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ।
তিনি বলেন, গত ৫ বছরে দেশে ৫ লাখ সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিরাট সাফল্য এসেছে। সরকার এই বছরই মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করবে। ধানমন্ডিতে শিগগিরই মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হবে। রাজধানীর সব বিদ্যুৎ লাইনের পর আশ-পাশের জেলায়ও বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হবে। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের জন্য যে নীতিমালা রয়েছে তা বস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি একটি বিশাল উচ্চতায় স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে সবাইকে আরো সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা রাখতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে বাঙালি জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ।
তারা বলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবাই আজ একতাবদ্ধ। সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে ‘এ বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো।’
তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে ‘উন্নয়নের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূল, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও বিকাশ, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।