বাজিস-৫ : উত্তরাঞ্চলে বাঁশের সুদিন ফেরাতে প্রস্তুত ডোমার আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

148

বাজিস-৫
নীলফামারী-বাঁশ গবেষণা
উত্তরাঞ্চলে বাঁশের সুদিন ফেরাতে প্রস্তুত ডোমার আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
নীলফামারী, ২১ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : উত্তরাঞ্চলে বাঁশের ঐতিহ্য ফেরাতে জেলার ডোমার উপজেলায় স্থাপিত হয়েছে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম ওই কেন্দ্রটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
এক সময়ে গ্রামীণ জনপদে বাঁশ বাগানের সংখ্যা ছিল অধিক। সে সময়ে গৃহস্থালী, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরী পণ্যের আধিক্য ছিল। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের বাড়ি-ঘর তৈরী হতো বাঁশ দিয়েই। সৌখিন আসবাব পত্র তৈরীর কাজেও বাঁশের ব্যবহার ঘিরে ক্ষুদ্রাকারে গড়ে উঠেছিল শিল্প। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাঁশ চাষের সঠিক উদ্ভাবন না পৌঁছায় কমেছে উৎপান। অনেকে নিরুৎসাহিত হয়ে বাঁশ বাগানের জমি এখন ব্যবহার করছেন কৃষিকাজে। বাঁশের এসব ঐতিহ্য ফেরানোর কাজ হাতে নিয়েছে আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতিতে উৎপাদন ও ব্যহার বাড়িয়ে চাষীদের আর্থিকভাবে লাভবান করা কেন্দ্রটির প্রধান উদ্দেশ্য ।
আঞ্চলিক ওই গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, কাঠের আসবাবপত্র তৈরীতে বন ধ্বংসের হার ব্যাপক। বনের গাছ বাঁচাতে বাঁশ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরী করা হলে গাছ রক্ষা পাবে। একটি বাঁশঝাড়ের ৩০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত উৎপাদন ক্ষমতা থাকে। বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র দর্শণীয় ও পরিবেশ বান্ধব। এর স্থায়িত্ব প্রায় ২৫ বছর, দামও অর্ধেক। একটি সেগুন গাছ পরিপক্ক হতে সময় লাগে অন্তত ৪০ বছর। আর একটি বাঁশ পরিপক্ক হতে সময় লাগে তিন থেকে চার বছর।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে। প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সমাপ্তের পরিকল্পণা থাকলেও সেটি এখন অপেক্ষায় উদ্বোধনের। রংপুর বিভাগের ৫৮টি উপজেলার আধুনিক পদ্ধত্তিতে বাঁশ চাষের পরিকল্পণা রয়েছে কেন্দ্রটির।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ৩৩ জাতের বাঁশ রয়েছে। রংপুর অঞ্চলের সাধারত মোথা থেকে বাঁশের চাষ হয়। উন্নত পদ্ধতি কঞ্চি কলম থেকে বাঁশ চাষে উৎপাদন বেশী হয়। কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করবে কেন্দ্রটি। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে ওই বাঁশ থেকে সৌখিন আসবাবপত্রসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের বিভিন্ন উপকরণ তৈরীর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের সেটির দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা হবে।
গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ একটি চারতলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রযুক্তি বিষয়ক ১০টি প্রদর্শণী প্লট স্থাপন করে বাঁশ চাষ ব্যবস্থানার উপর ১৯টি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম।
আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র রিসার্স অফিসার মো. আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নির্দেশনায় ওই গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হলে এ অঞ্চলের ৩০ থেকে ৪০ গুণ বাঁশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। প্রক্রিয়াকরণের প্রশিক্ষণ প্রদান করে চার থেকে পাঁচগুণ বাঁশের আয়ু বাড়ানো হবে।
তিনি জানান, বর্তমানে ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন কেন্দ্রটিতে। ডোমার বনবিভাগের পাশে মনোরম পরিবেশে দুই একর জমির উপর নির্মিত প্রতিষ্টানটি ২৬ জন জনবল নিয়ে শিগগিরই পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১২৪০/নূসী