বাসস ক্রীড়া-১ : স্বাগতিক রাশিয়ার বিদায়; ২০ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া

296

বাসস ক্রীড়া-১
ফুটবল-রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া
স্বাগতিক রাশিয়ার বিদায়; ২০ বছর পর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া
সোচি, ৮ জুলাই ২০১৮ (বাসস) : স্বাগতিক রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ২০ বছর পর ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো ক্রোয়েশিয়া। গতরাতে ২১তম বিশ্বকাপের চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ ও অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিট শেষে ২-২ সমতা বিরাজ করে। ফলে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ক্রোয়েশিয়া ৪-৩ গোলে হারায় রাশিয়াকে। ফলে ১৯৯৮ সালের পর আবারো ও দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের সেমিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো ক্রোয়েশিয়া। তবে চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনাল থেকে বিদায় নিলো রাশিয়া।
এই নিয়ে চতুর্থবারের মত মুখোমুখি হয় রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া। এর আগে তিনবারে একবার জয় পায় ক্রোয়েশিয়া। তবে এবারের আসরে শেষ আটে দু’দলই এসেছে দাপট দেখিয়ে। শেষ ষোলতে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় রাশিয়া। ক্রোয়েশিয়াও চমক দেখিয়েছে। তবে সেটি গ্রুপ পর্বে। দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে বিধ্বস্ত করেছে ক্রোয়েশিয়া। তাই ফেভারিটের তকমা নিতে পারেনি কোন দলই।
সোচিতে রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া উভয় দল একই ৪-২-৩-১ ফরমেশনে মাঠে নামে। তবে ম্যাচের শুরু থেকেই ক্রোয়েশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে রাশিয়া। দ্বিতীয় মিনিটে স্ট্রাইকার আরটেম দিজিউবার পাস থেকে বল পান মিডফিল্ডার ডেনিস চেরিশেভ। তবে তার ডান পায়ের শটে বল খুঁেজ পায়নি গোলবারের জাল।
পঞ্চম মিনিটে আবারো আক্রমন করে রাশিয়া। ডান-প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ক্রোয়েশিয়ার বক্সে প্রবেশের চেষ্টা করেন দিজিউবা। কিন্তু সামনে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণদূর্গের কারণে বাইরে থেকেই শট নেন তিনি। তার শট আটকে দেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডাররা।
ম্যাচের শুরুতে রাশিয়ার দু’টি আক্রমন রুখে নিয়ে পাল্টা আক্রমনে যায় ক্রোয়েশিয়া। ৭ মিনিটে মিডফিল্ডার লুকা মড্রিচের ক্রস থেকে হেড নিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ডেজান লভরেন। বল গিয়ে জমা পড়ে রাশিয়ার গোলরক্ষক ইগর আকিনফিবের হাতে।
শুরুতে আক্রমন করে গোল আদায়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হবার পর বল দখলের লড়াই শুরু কওে দুই দল। মধ্য মাঠের দখল নিয়ে আবারো আক্রমনের চেষ্টা করে দু’দল। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিলনা কোন দলই।
শেষ মেষ সফল হয় রাশিয়াই। ৩১ মিনিটে চেরিশেভের গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় স্বাগতিক রাশিয়া। মধ্যমাঠ থেকে বল পেয়ে দিজিউবার সাথে ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলেন চেরিশেভ। তবে দিজিউবার কাছ বল পেয়ে ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের তিন গজ দূর থেকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে আচমকা দূরপাল্লার শট নেন চেরিশেভ। তার কোনাকুনি শটে বল গিয়ে জমা পড়ে ক্রোয়েশিয়ার জালে। বাঁ-দিকে ঝাপিয়েও বলের নাগাল পাননি ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ড্যানিয়েল সুবাসিচ। ফলে ম্যাচে লিড নেয় রাশিয়া।
অবশ্য লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি রাশিয়া। ৮ মিনিট পরই গোল পরিশোধ করে দেয় ক্রোয়েশিয়া। স্ট্রাইকার মারিও মান্দজুকিচের ক্রস থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল করেন আক্রমনভাগের খেলোয়াড় আন্দ্রেই ক্রামারিচ(১-১)। তার গোলে সমতা নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ হয়। তবে এই অর্ধে বল দখলে বেশ এগিয়ে ছিলো ক্রোয়েশিয়া।
সেই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই বল দখলে রাখে ক্রোয়েশিয়া। এমন অবস্থায় ৬০ মিনিটে গোল পেয়েই গিয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু তাদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাশিয়ার গোলবার। ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার ইভান স্ট্রিনিচের ক্রস করা বলটি ফিরিয়ে দেন রাশিয়ার ডিফেন্ডাররা। জটলার মধ্যে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে যান স্ট্রাইকার ক্রামারিচ। গোলমুখে তার মাটি কামড়ানো শটটি রাশিয়ার গোলবারের বাঁ দিকে লেগে ফিরে গেলে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হয় ক্রোয়েশিয়া।
এরপর নির্ধারিত সময় শেষ হবার আগ পর্যন্ত আক্রমন করে গেছে রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু নিজেদের ভুলে গোল আদায় করে নিতে পারেনি দু’দলের খেলোয়াড়রা। ফলে ১-১ সমতায় শেষ ম্যাচ নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও ইনজুরি সময়ের ৫ মিনিট। এতে ম্যাচটি গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়েও বল দখলে নিয়ে আক্রমনের চেষ্টা করে দু দলই। কিন্তু যুতসই কোন আক্রমন করতে পারেনি তারা। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের ১০ মিনিটে গোলের স্বাদ নেয় ক্রোয়েশিয়া। মড্রিচের ক্রস থেকে বক্সের ভেতর জটলার মধ্যে হেডে গোল করেন ডিফেন্ডার ডোমাগো ভিদা(২-১)।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধ শেষে ২-১ গোলেই এগিয়ে ছিলো ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ক্রোয়েশিয়ার উপর চাপ তৈরি করে রাশিয়া। ফলে দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিটে গোলের স্বাদ নেয় রাশিয়া। ডিফেন্ডার এ্যালান ডিজাগোয়েভের ফ্রি-কিক থেকে মাথা ছুইয়ে গোল করেন রাশিয়াকে খেলায় ফেরান রক্ষণভাগের খেলোয়াড় মারিও ফার্নান্দেস(২-২)। শেষ পর্যন্ত সমতা দিয়ে অতিরিক্ত সময় শেষ হলে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে প্রথম শটেই ব্যর্থ হন রাশিয়ার স্ট্রাইকার ফিওডর সমোলভ। সমোলভের দুর্বল শট রুখে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক সুবাসিচ। তবে নিজেদের প্রথম শটে গোল আদায় করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয় শটে গোল করে রাশিয়া। কিন্তু নিজেদের দ্বিতীয় শটে গোল পায়নি ক্রোয়েশিয়া। মিডফিল্ডার মাতেও কোভাচিচের শট রুখে দেন রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফিভ। ফলে প্রথম দু’শট শেষে টাইব্রেকারে ১-১ সমতা।
তৃতীয় শটটি গোলবারের বাইরে মেরে রাশিয়াকে চাপে ফেলেন ডিফেন্ডার মারিও ফার্নান্দেস। যিনি ম্যাচের ১১৫ মিনিটে গোল করে রাশিয়াকে নিশ্চিত হার থেকে রক্ষা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার এই পেনাল্টি মিসের কারনেই ম্যাচ হারে রাশিয়া। কারন শেষ তিনটি শট নিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় ক্রোয়েশিয়া। শেষ দু’টি শটে গোল করলেও, তা কোন কাজে দেয়নি রাশিয়াকে। উল্টো রাশিয়ার বিদায় হয়েছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনাল থেকে। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালের পর আবারো কোয়ার্টারফাইনাল থেকে বিদায় নিলো রাশিয়া।
বাসস/এএমটি/১০৪৫/স্বব