শরীয়তপুরের মিরাশার সমবায় চাষী বাজারটি কৃষকদের কল্যাণে পরিচালিত হচ্ছে

508

॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস): জেলার জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নে শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়ক ঘেষে মিরাশার সমবায় চাষী বাজারটি কৃষকদের কল্যাণে পরিচালিত হচ্ছে। শরীয়তপুরে উৎপাদিত কৃষি পণ্য এখানে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ২০০৮ সালে মাত্র ৩২ শতক জমির উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশসানের সহায়তায় বাজারটি শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার ১১ বছরের ব্যবধানে বাজারটি সম্প্রসারিত হয়ে এখন ১২০ শতকে পৌছেছে। বাজার ব্যবস্থাপনার গ্রহণযোগ্য কৌশলের কারণে ধীরে ধীরে এ কৃষি বাজারটি হয়ে ওঠে কৃষি পণ্য বেচা-কেনার স্বর্গ রাজ্য।
কৃষকরা সমবায় ভিত্তিতে বাজারটিতে এখন ১০০ টি ঘর তুলে তাদের উৎপাদিত পণ্য এখানে বেচা-কেনা করছেন। ফলে জাজিরার প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কৃষকরাও সর্বোচ্চ লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে বছরে শত কোটি টাকারও বেশী কৃষি পণ্যে বেচা-কেনা হয় এখানে। কোন মধ্য সুবিধাভোগী না থাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কোন খাজনা নেয়া হচ্ছে না। যে কারণে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বেশী লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই সম্প্রসারিত হচ্ছে বাজারের পরিধি ও বাড়ছে ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষক সমবায় ভিত্তিক এ
বাজারটি প্রচলিত কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাকে ছাপিয়ে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
সারা বছর বেচা-কেনা চলমান থাকলেও নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল পর্যন্ত বাজারের বেচাকেনা থাকে জমজমাট। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কৃষক, স্থানীয় পাইকার ও দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারের পদচারণায় মুখর থাকে বাজারটি। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকার কৃষিপণ্য বেচা-কেনা হয়। এখানে কোন মধ্য সুবিধাভোগী না থাকায় কৃষকদের পাশা পাশি ছোট-বড় পাইকাররাও বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ বাজারের কৃষি পণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাসহ রপ্তানী হয় বিদেশেও।
জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ভুইয়াকান্দি গ্রামের কৃষক মো: আফজাল মোল্লা বলেন, এ বাজারটি প্রতিষ্ঠার আগে ফড়িয়াদের কারণে আমাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পেতাম না। আবার যে বাজারে যেতাম তাদেরকেও খাজনাও দিতে হতো। কিন্তু মিরাশার চাষী বাজারটি চালু হওয়ার পর থেকে এখন আমাদের আর বাজারের খাজনার খরচটা দিতে হয় ন। ফলে আগের তুলনায় আমাদের এখন লাভ হচ্ছে অনেক বেশী।
একই উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক ইউনুস মোল্লা বলেন, বাজারটি কৃষি মাঠের পাশে ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় আমাদের দিনের কাজ শেষ করে বিকেলে যখন কাজ থাকেনা তখন অতি সহজেই এখানে পণ্য নিয়ে আসতে পারি। ফলে আমাদের ক্ষেতের কৃষি কাজেরও কোন ক্ষতি হয় না।
মিরাশার চাষী বাজার সমবায় সমিতির নিয়মিত পাইকার মো: জলিল মিয়া বলেন, এ বাজারের করলা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাচামরিচ, ফুলকপি, বাধাপকি, পটলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচা-কেনা হয়। এ সকল সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশর্^বর্তী জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নেয়। এ বাজারে টাটকা ও নিরাপদ সবজি পাওয়া যায় বলে চাহিদাও অনেক বেশী। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৬৫-৭০ মণ করলা ঢাকার কারওয়ান বাজারে যায়। সেখান থেকে পরে বাছাই করে ২৫-৩০ মণ করলা অন্য বড় পাইকারের মাধ্যমে বাহরাইন, দুবাই ও ইটালীতে রপ্তানী হচ্ছে। ফলে কৃষকদের পাশা পাশি আমরাও তুলনামুলক বেশী লাভবান হচ্ছি।
বাজার কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো: ইসমাইল মোল্লা বলেন, কৃষক ও পাইকারদের হয়রানি বন্ধে বাজার কমিটি নিয়মিত মনিটরিং করছে। কোন অভিযোগ বা সমস্যা থাকলে তাৎক্ষণিক তার সুরাহা করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও সমবায় অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতায় কৃষকদের কল্যাণে পরিচালিত হচ্ছে এ কৃষি বাজারটি। এ বাজারের সুনাম এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জামাল হোসেন বলেন, মিরাশার চাষী বাজারটি কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় কৃষকরাই বেশী লাভবান হচ্ছেন। কৃষি পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাগন সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও মনিটরিং করছেন। সমন্বিত ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার ফলে এ বাজারটি দেশের প্রচলিত কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাকে ছাপিয়ে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।