সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত

205

সংসদ ভবন, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে আজ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতে রেওয়াজ অনুযায়ি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
সাবেক সংসদের সদস্য মরহুম মোজাম্মেল হোসেন গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন ( ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর ৫ মাস ৯দিন।
তিনি পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে মোট ৫ বার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ওই সময় সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মো. মোজম্মেল হোসেন ১৯৮৫ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাগেরহাট জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্পে চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন এলাকায় অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি আদর্শের রাজনীতি করেছেন। অনেক নির্যাতন সহ্য করেও তিনি দল ছেড়ে যাননি। তিনি ৩৫ বছর এলাকার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। কর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক না থাকলে এটা কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সেবামূলক কাজও করেছেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন অমায়িক, মার্জিত ও ভদ্র মানুষ ছিলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতে আশ্রয় নেয়া অসহায় শরনার্থীদের চিকিৎসা সেবা দিতেন। দক্ষতার সাথে তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ¯েœহভাজন ছিলেন তিনি। তার মতো একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদকে হারিয়ে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন একজন হাসিখুশি ও মনখোলা মানুষ ছিলেন। সিডর আক্রান্ত এলাকায় তিনি আমাদের নিয়ে দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কিভাবে মানুষকে সেবা করা যায় সিডরের সময় আওয়ামী লীগ মানুষকে সেদিন দেখিয়ে গেছেন। তিনি অত্যন্ত সাদাসিদা জীবন-যাপন করতেন।
তিনি বলেন, ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন আর ফেরত আসবেন না। তবে তার কাজের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন। তার যে রাজনৈতিক আদর্শ তা অনুকরণীয় হয়ে থাকবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জনগণ, দলীয় কর্মী ও এলাকার মানুষের সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিল। তিনি অত্যন্ত হাস্যরসাত্মক মানসিকতার মানুষ ছিলেন। তিনি একজন সৎ ও আদর্শবান মানুষ ছিলেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, জীবনের চেয়ে মৃত্যুই সত্যি, মৃত্যুই বাস্তব। কেউ মৃত্যুবরণ করলে কেউ আর ফেরৎ আসেন না। ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন তার কর্মের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চালু করেছেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের জন্য অনেক কষ্টের বিষয় হলে মো. মোজাম্মেল হোসেনের মতো একজন নেতাকে হারিয়েছি। তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তার প্রতি দলের সভাপতি ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার অগাদ আস্থা ছিল।
শাজাহান খান বলেন, ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেনের স্মৃতি আমরা সারাজীবন বহন করে যাবো। তিন একজন ভাল বক্তা ছিলেন। একজন চমৎকার মানুষ ছিলেন তিনি, এমন সদালাপি ও বিনয়ী মানুষ রাজনীতিতে অনেক বিরল। তিনি একজন আদর্শবান মানুষ ছিলেন। তার থেকে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষার রয়েছে।
সরকারি দলের সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, মো. মোজাম্মেল হোসেন একজন চমৎকার মানুষ ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, পরোপকারী, সমাজসেবক ছিলেন। তিনি একজন নির্ভিক মানুষ ছিলেন। তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক-বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন খাতে ভাতা চালু করেছেন।
সরকারি দলের সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন মো. মোজাম্মেল হোসেন একজন বহুমাত্রিক রাজনীতিবিদ ও সৎ, নির্মূহ মানুষ ছিলেন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন।
ডা. আফম রুহুল হক বলেন, মো. মোজাম্মেল হোসেন একজন চিকিৎসক ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি সমাজ সেবক হিসেবে মানুষের সেবা করেছেন। তার পথ ধরে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে কাজ করে যাবো।
সরকারি দলের সদস্য আব্দুস শহিদ, আ স ম ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান, জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান
আলোচনা শেষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা ও তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী।
এরপর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ি বৈঠক মুলতবি করা হয়।