বাসস দেশ-১৪ : উপকূলীয় এলাকায় নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের কম্বিং অপারেশন

109

বাসস দেশ-১৪
উপকূলীয় এলাকায় নিষিদ্ধ জাল
উপকূলীয় এলাকায় নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের কম্বিং অপারেশন
বরগুনা, ৯ জানুয়ারি, ২০২০ (বাসস) : বরগুনাসহ ১৩ জেলার উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য স¤পদ রক্ষায় অবৈধ ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের কম্বিং অপারেশন চলছে। ৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ কম্বিং অপারেশনে বরগুনায় ইতোমধ্যে আইন অমান্য করায় ১৬ জন জেলেকে সাজা দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে মাছ, জাল, ট্রলার। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, মৎস্য স¤পদ ধ্বংসকারী বেহুন্দি ও কারেন্ট জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল নির্মূলে সম্মিলিতভাবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশ এবং কোস্টগার্ডসহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন। এ অপারেশন ৭ জানুযারি থেকে ১৩ জানুয়ারি এবং ২১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই ধাপে এ অপারেশন চলবে।
তিনি আরও জানান, মৎস্য সংরক্ষণ আইন-১৯৫০ অনুযায়ী, বেহুন্দি জাল এবং কারেন্ট জাল দিয়ে সারা বছর দেশের সব নদী ও উপকূলীয় এলাকায় মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার সুবাদে মৎস্য সম্পদ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি থেকে বনের গাছপালাও রক্ষা পাবে।
উপকূলীয় এলাকার মৎস্য বিভাগের জেলা কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ও বেআইনি ‘ঘোপ’ বা ‘চরগড়া’ জালের ফাঁদ তৈরিতে শতাধিক পরিমাণে গেওয়া ও কেওড়া গাছের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। এইসব গাছের সিংহভাগই বরগুনার লালদিয়া, হরিণঘাটা ও চরলাঠিমারা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কেটে আনা হয়। কম বয়েসী লাঠি আকৃতির গাছ খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নতুন জন্ম নেওয়া গাছ কাটার ফলে সংরক্ষিত বন উজাড় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ।
বরগুনা ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার নদী তীরবর্তী চর ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে অনেক জেলে। এতে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও পোনা ধরা পড়ছে। জেলেদের কাছ থেকে জানা গেছে, ‘চড়গড়া’ নামের নিষিদ্ধ জাল মূলত প্রতিটি তিন থেকে চারশ মিটার লম্বা ও দেড় থেকে দুই মিটার চওড়া হয়। এই জাল খুবই সুক্ষ্ম ফাঁসের। এসব জাল ভাটিতে নদীর ঢালের চরে খুঁটি পুঁতে বেঁধে রাখা হয়। জোয়ারে জাল তুলে খুঁটিতে বেঁধে দেয়ার পর ভাটিতে পানি নেমে গেলে মাছ জালে আটকে থাকে। একই রকমের জাল ‘ঘোপ’। চড়গড়ার মত এসব জাল বঙ্গোপসাগর ও নদীতে জেগে ওঠা চরের চারদিকে ভাটির সময় ছড়িয়ে রাখা হয়। জোয়ারের সময় এসব জাল নির্দিষ্ট উচ্চতায় খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। ফের ভাটিতে জোয়ারের পানি নেমে গেলে মাছ এই সুক্ষ ফাঁসের জালে আটকে যায়। এইসব জালে ছোট-বড় মাছের সঙ্গে একেবারে ক্ষুদ্র পোনাও বের হতে পারে না, এমনকি মাছের ডিমও নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরুুতেই বঙ্গোপসাগরের মোহনাসহ এর আশপাশের চর ও নদী তীরবর্তী চরে বেহুন্দি, ঘোপ ও চড়গড়া জালে মাছ শিকারের তৎপরতা শুরু হয়। বিশেষ করে পায়রা বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা চর, লালদিয়া হরিণঘাটা বনের কোল ঘেঁষে চরাঞ্চল, বলেশ্বর তীরবর্তী পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা, রুহিতা, ছোট টেংরা ও চরদুয়ানীতে চলে অবাধে নিষিদ্ধ মাছ শিকার। একইভাবে কাঁঠালতলী এলাকার বেশ কিছু জায়গায়, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, সোনাকাটা, নিদ্রা ও সখিনা এলাকা, বিষখালী নদীর গুলিশাখালী, মাঝের চর, ডালভাঙা এলাকা, পায়রা নদের গোরাপদ্মা, পালের বালিয়াতলী, কুমিরমারার চর, সোনাতলা সৃজিত বনাঞ্চল, বগীসহ তিনটি নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চলে এই তিন ধরনের জালের ব্যবহার চলে। কুয়াকাটার চড় গঙ্গামতি, ফাতরার চর মহিপুর এলাকার নদী তীরবর্তী চর ও নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরে এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন নেটওয়ার্কের সভাপিত আরিফ রহমান জানিয়েছেন,চরগড়া, ঘোপ ও বেহুন্দির মতো নিষিদ্ধ জালের অত্যাচারে একদিকে যেমন বন উজাড় হয়, তেমনি উপকূলের প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দিনে দিনে এইসব জালে মাছ শিকারের হার বাড়ছে।
বাংলাদেশ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, অঅইন অমান্যকারী জেলেদের ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, বনের গাছ কেটে চরগড়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে, এ ধরনের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রবীন্দ্রনাথ মাল জানিয়েছেন, অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কোস্টগার্ড পাথরঘাটা ঘাঁটির কমান্ডার বিশ্বজিৎ বড়–য়া জানান, আমরা এসব জাল নিধনে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, অবৈধ মাছ শিকারি জেলেদের নিবৃত্ত করতে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলেরা বেপরোয়া ও ধূর্ত প্রকৃতির।তাদেরকে সহজে নিবৃত্ত করা যায় না। তাই উপকূলীয় অন্যান্য জেলার সাথে সমন্বয় করে এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত করা হচ্ছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৮০৪/মরপা