বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বস্ত্র রপ্তানী বৃদ্ধির লক্ষ্যে পণ্যের বহুমুখীকরণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

119

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বস্ত্র দিবস
বস্ত্র রপ্তানী বৃদ্ধির লক্ষ্যে পণ্যের বহুমুখীকরণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। আশা করি বিদেশি বিনিয়োগও আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ এবং বিশেষ করে এর আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে বেসরকারি খাতের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই এখাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা দরকার।’
তিনি নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে রাষ্ট্রীয় খাতের দুরাবস্থার কথাও এ সময় উল্লেখ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় খাতে গেলেই অজানা কারণে আমরা লাভের মুখ দেখি না। জানি না এর পেছনে মূলত কী কারণ। তাই বেসরকারি খাতের দিকেই আমাদের আগ্রহ বেশি। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪৪ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যার অধিকাংশই নারী। পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে এ খাতকে শক্তিশালী করছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের ৪টি খাতে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছরে অবশিষ্ট সকল খাতে ১ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রণোদনা বাবদ বাজেটে অতিরিক্ত ২,৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম মজুরি কমিশন শক্তিশালী করা, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা জারি সহ শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, দেশের বস্ত্র খাতকে যুগোপযোগীকরণ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনে সহায়তাকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে বস্ত্রনীতি, ২০১৭ এবং বস্ত্র আইন, ২০১৮ প্রণয়ন এবং বস্ত্র পরিদপ্তরকে শক্তিশালী করে বস্ত্র অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বস্ত্রখাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সারাদেশে এ পর্যন্ত ৭টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ৭টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং ৪২টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বস্ত্রখাতে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করছে। একইসঙ্গে বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁতশিল্পের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বস্ত্র চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ তাঁতশিল্প যোগান দিয়ে থাকে।’
পাটপণ্যের প্রসারে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘পাট এমন একটি কৃষিপণ্য যা পরিবেশবান্ধব। আমরা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছি। এখন পাট দিয়ে বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি বস্ত্র নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। এর বিকাশে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
একদা সারা বিশ্বে দেশের মসলিনের সুনামের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, ‘মসলিনের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের সূতা ও কাপড় তৈরীর পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড রেশম চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের উন্নয়নের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের সাথে রেশম চাষ সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এ বছর রাজশাহী রেশম কারখানায় ১৯ টি পাওয়ার লুম চালু করা হয়েছে।
দেশের বন্ধ কল-কারখানা চালুতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন এর ১৬টি বন্ধ মিল পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ পদ্ধতিতে চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে দুটি বন্ধ মিল পিপিপি’র আওতায় পরিচালনার নিমিত্তে চুক্তি স্বাক্ষরপূর্বক প্রাইভেট পার্টনারদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথভাবে ৪টি কারখানা পিপিপি এর আওতায় চালু করার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় বর্ষব্যাপী ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের প্রসংগ টেনে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি এখানেই থেমে না থেকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে একটি সুন্দর দেশ পায়, উন্নত জীবন পায়-তা নিশ্চিত করতে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের উদ্যোগও তুলে ধরেন।
তিনি উল্লেখ করেন, আগামীকাল ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ১৭ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক ক্ষণ গণনা শুরু হবে এবং ২৬ মার্চ ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন পর্যন্ত এই ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপিত হবে।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭১০/-শআ