বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া ইন্টারনেটে কোন কিছু শেয়ার করবেন না : প্রধানমন্ত্রী

122

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- ডিজিটাল দিবস
সত্য-মিথ্যা যাচাই ছাড়া ইন্টারনেটে কোন কিছু শেয়ার করবেন না : প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু তারা কি দেখছে, কোথায় যাচ্ছে-তার ওপর নজরদারি অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ আসলে এটা একটা আসক্তির মত হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ইন্টাররেটে বা মোবাইল, আইপড ও কম্পিউটারে যুক্ত থাকলে মনের ওপর একটা চাপ আসে। এতে শরীরের ওপর চাপ আসে। চোখের ক্ষতি হয়, ব্রেনের ক্ষতি হয়। কাজেই এই বিষয়গুলোর ওপরে সচেতনতা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’
‘কাজেই এই আসক্তিতে যেন কোন তরুন বা শিশু-কিশোর না পড়ে। বিশেষকরে শিশু-কিশোরদের বেলায় এটা আরো বেশি প্রযোজ্য। কারণ আমরা চাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের সমাজটাও যেন ভালভাবে গড়ে ওঠে,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজ দারিদ্রের হার কমিয়ে ২০ ভাগে আনতে সক্ষম হয়েছি এবং এটাকে আরো কমাতে চাই। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত করেছি, মূল্যস্ফীতি ৫ ভাগে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বরের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান’ ঘোষণা করে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিলাম। আমরা জনগণকে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দিয়েছি। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা এখন অন্যদেশ অনুসরণ করছে ।
তাঁর সরকার বিগত প্রায় ১১ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ–কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্মেন্ট এবং আইসিটি ইন্ডাষ্ট্রি প্রোমোশনকে ঘিরে নেওয়া অধিকাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় জনগণ এখন ঘরে বসে ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করতে পারছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সারাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে সারাদেশে ৫ হাজার ৮শ’ ৬৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। শুধুমাত্র ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে ১০ বছরে মানুষকে ৪৬ কোটি সেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে এখন মোবাইল ফোন গ্রাহক ১৬ কোটি ৪১ লক্ষ ৭০ হাজার। বিএনপি সরকারের এক মন্ত্রীর মনোপলি ব্যবসা ভেঙ্গে তাঁর সরকার মোবাইল ফোনকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়াতেই এটা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সম্প্রচারভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ সহজ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ হাজার ৬শ’টি ইউনিয়ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় এনেছি, এ বছর আরও ২০০ ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি দেওয়া হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দুর্গম এলাকার বাকি ৭৭২টি ইউনিয়নে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দিব। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ৬৫ হাজারের বেশি।
সরকার প্রধান বলেন, ই-টেন্ডার ও ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়নে সফলতা অর্জন করেছি। এক জায়গায় সকল সমস্যার সমাধান-এই লক্ষ্য নিয়ে ‘একসেবা’, ‘এক-পে’ ও ‘একশপ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। একইসঙ্গে জনগণ ‘৯৯৯’, ‘৩৩৩’ এবং ‘১০৯’ নম্বরে কল করে বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশে স্টার্টআপ সংস্কৃৃতি গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছি।’ ‘তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা মেটাতে জেলা পর্যায়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে নির্মিত ৩টি হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্কে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা এ পর্যন্ত ২৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এছাড়া সরকার বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ডিজিটাইজড তথ্যসেবা ও ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার চালু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজ শুরু করেছে। ভবিষ্যতে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সাথেও দেশকে যুক্ত করা হবে। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশের তথ্য চুরি হয়ে যাবে বলে অজুহাত টেনে দেশকে বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হতে দেয়নি, দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে।’
তিনি সে সময় নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানীর কাছ থেকে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করে বাকীটা অনুদানে দেশের জন্য ১০ হাজার কম্পিউটার সংগ্রহের প্রকল্প চুড়ান্ত হওয়ার পরেই সরকারের দায়িত্বে আসতে না পারায় এবং বিএনপি সে প্রকল্প বাতিল করে দেয়ার ফলে দেশের লোকসান ঘটানোর ঘটনা স্মরণ করে এর কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, এজন্য পরিশোধকৃত অর্থ গচ্চা সহ দেশের অতিরিক্ত ৩২ কোটি টাকার জরিমানা গুণতে হয়েছিল। কারন নেদারল্যান্ডের জাতীয় ফুল টিউলিপ নামে সেই ডাচ কোম্পানীর নাম থাকায় বিএনপি’র লোকেরা খালেদা জিয়াকে বোঝায় যে- ‘এটি শেখ রেহেনার মেয়ে’র কোম্পানী (বর্তমানে টানা তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী)।’
২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের উদ্যোগ সহ আগামী প্রজন্মের জন্য শতবর্ষ মেয়াদী ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণের প্রসংগ টেনে আইসিটির সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭২০/-শআ