বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

136

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- পুলিশ সপ্তাহ-ভাষণ
পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে।
২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা এবং নৈরাজ্য মোকাবেলায় পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনীর ২৯ জন সদস্যকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। পুলিশ সদস্যগণ তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডকে প্রতিরোধ করেছে এবং জনগণ তাদের পাশে ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় প্রতিটি পুলিশ সদস্য নিজের জীবনকে বাজি রেখে দেশের মানুষ এবং জাতীয় সম্পদকে রক্ষা করেছেন।
তিনি এজন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানান।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, বাংলাদেশ থেকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতি দূর করবো এবং এসবের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রায় ১০ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশ পুলিশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’
১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসনেও পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্প্রতি আর্মড পুলিশের দু’টি এবং র‌্যাবের একটি ব্যাটালিয়ন গঠনপূর্বক কক্সবাজারে মোতায়েন করা হয়েছে।
সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে পুনরায় স্কুল পর্যায় থেকে ট্রাফিক আইন শিক্ষা করার বিষয়েও জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে যেমন জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে তেমনি সড়কে শৃঙ্খলাও ফিরিয়ে আনতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট সুশৃঙ্খল ভূমিকা রাখছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা-‘৯৯৯’ ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জনগণ ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের সেবা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে দেশে গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতেও পুলিশ বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ পুলিশকে আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রাপ্তির জটিলতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুলিশ বাহিনীতে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিশেষায়িত ইউনিট- পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়েছে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন, পুলিশ স্টাফ কলেজ ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিসহ পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারগুলিতে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগসহ বাংলাদেশ পুলিশে সাইবার পুলিশ সেন্টার, ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব এবং হাসপাতাল স্থাপনের উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার থানা, ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্র, ব্যারাক, আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দসহ বিদেশে পাঠিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং যানবাহন সমস্যার সমাধানে উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন সরবরাহ করেছে।
আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যেন পুলিশ বাহনী চলতে পারে সে ব্যবস্থাও তাঁর সরকার নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে নারী পুলিশের জন্য একটি স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
এছাড়া পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা,এর আওতায় কমিউনিটি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু এবং পুলিশ সদস্যদের জন্য একই ধরনের রেশনিং ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি বলেন,‘অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন প্রদানের বিষয়টিও আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। আমরা সেটারও ব্যবস্থা করে দেব।’
প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে তৎকালিন পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দুর্বার প্রতিরোধ এবং মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন,‘১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্যগণ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকল পুলিশ সদস্যকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশী শোষকদের পুলিশ নন- জনগণের পুলিশ।’
বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি জনগণের সমস্যাকে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখারও আহবান জানান।
২০২০ সালকে দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ মার্চ জাতির পিতা জন্ম গ্রহণ করেছেন। আর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী। আমরা ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছি।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের এই দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণ সারবিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলবে, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি, আমাদের তা ধরে রেখে আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যাতে আমাদের দেশের জনগণ এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুন্দর এবং উন্নত জীবন পেতে পারে।
দারিদ্র্য হ্রাসে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, এই প্রয়াসে আরো এগিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতাও আমাদের কাম্য।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৪৫০/এমএসআই