বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (২য় ও শেষ কিস্তি) : লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে ২০২০ সালের বর্ষপণ্য ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

158

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (২য় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বাণিজ্য মেলা-ভাষণ
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংকে ২০২০ সালের বর্ষপণ্য ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং ‘ডুয়িং বিজনেসে ব্যয় হ্রাসে’র জন্য বিভিন্ন সংস্কারমূলক কর্মসূচি এবং উন্নয়নের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসসহ সমগ্রিকভাবে ইকোনমিক জোন এবং সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।
অতীতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমির যে সমস্যা ছিল তা দূরীকরণ এবং যত্র-তত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে আবাদী জমি যেন নষ্ট না হয়। আবার ব্যবসায়ীদের সবরকমের সুযোগ সুবিধা যেন একটি জায়গায় পাওয়া যায় সে জন্যই সরকারের এ উদ্যোগ, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক আপডেট-২০১৯’এর রিপোর্ট অনুসারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পণ্য ও সেবা খাতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
তাঁর সরকার মাত্র ১০ বছরের মধ্যে আমরা এই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংকের ২০২০ প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজ অব ডুয়িং বিজনেস গ্লোবাল র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে গত বছর থেকে ৮ ধাপ উপরে ১৬৮তম অবস্থানে এসেছে। কাজেই, ২০২০ বছরটি তাঁর সরকারের জন্য খুবই গুতুরুত্বপূর্ণ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যারা ব্যবসায়ী এবং দেশে ব্যবসা করতে চান তাদের জন্য ইজ অব ডুয়িং বিজনেস আরো সহজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ব্যবসা করি না। কিন্তু সরকার ব্যবসা বান্ধব।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসার জন্য অন্যদের সুযোগ করে দেই। আর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান গত বছরের ৮৯তম থেকে বর্তমানে ৭২তম অবস্থানে আমরা চলে এসেছি। ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে আরো উন্নতি করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজ করার লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স ও গঠন করা হয়েছে।’
‘বাংলাদেশ এখন ২০২টি দেশে ৬ শতাধিক পণ্য রপ্তানি করছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পণ্য ও সেবা খাতে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দেশের রিজার্ভ এখন অতীতের যেকোন সময়ের থেকে বেশি সমৃদ্ধ আখ্যায়িত করে সরকার প্রধান ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদেরকে নিয়ে লন্ডনে ’দূত সম্মেলনে’র আয়োজন করে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপও তিনি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘এখন আসলে ডিপ্লোমেসিটা হয়ে গেছে ‘ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি’। এখন আর শুধু পলিটিক্যাল দিকে দেখলে হবে না।’
‘ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করার এবং নতুন নতুন রপ্তানি পণ্য খুঁজে বের করার’ দিকে ও দৃষ্টি দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট (এসডিজি) লক্ষ অর্জনে অর্থনৈতিক খাত বিশেষ করে শিল্প ও উৎপাদনশীল প্রকল্পে বিনিয়োগ একান্ত প্রয়োজন, উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী
উদ্যোক্তাবৃন্দকে আইসিটিসহ অন্য সব সেবা খাতের রপ্তানিতে এগিয়ে আসার মাধ্যমে সীমিত পণ্যের উপর রপ্তানি নির্ভরতা দূর করারও আহ্বান জানান তিনি।
একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধি জরুরী বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পাশাপাশি মানুষকে কর্মক্ষম করা, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাঁদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করাটাও একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেই তাঁর সরকারের নানা উদ্যোগ, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘একটা কথাই আছে-বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী-তাই আমরা বাণিজ্যের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি।’
একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা বিষয়ের দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি তা হলো-দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আমাদেরকে বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমি উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যে, দেশজ কাঁচামাল নির্ভর রপ্তানি পণ্য যথা পাটভিত্তিক বহুমুখী পণ্য, খাদ্যসহ এগ্রো-প্রসেসড্ পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, হিমায়িত মাছ, আম, আলু, হস্তশিল্পজাত পণ্য ইত্যাদি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এসব পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’
প্রতিবেশী দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকেই আমাদের দৃষ্টি। যে কারণে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং ব্যবসা-বাণিজ্যটাকে সহজ করে দেওয়ার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। একইসঙ্গে দেশে যাতে বিনিয়োগ আসে সেদিকেও দৃষ্টি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে এ মেলার আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাগণ যেমন তাদের নতুন পণ্যসম্ভার প্রদর্শনীর সুযোগ পাবেন, তেমনি দেশি-বিদেশি ক্রেতার পছন্দ, রুচি ও চাহিদা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বিস্তৃত করতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
মেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অংশগ্রহণকারীসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং একই সঙ্গে আরও বেশি পণ্য নিয়ে ভবিষ্যতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের অনুরোধও জানান।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭৪০/আরজি