ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশে আনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন ব্যবসায়ীরা

502

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস): ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তবে তারা এই সিদ্ধান্ত কার্যকর বা টেকসই করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারির পরামর্শ দিয়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ উৎপাদন খাতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে উৎপাদন খাতে অর্থাৎ শিল্প খাতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।
ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম কেন্দ্রিয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন,‘আমাদের অনেক দিনের দাবি ছিল ব্যাংল ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনা। কেন্দ্রিয় ব্যাংক এবার সেটাকে একটা কাঠামোর মধ্যে এনে সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর যেমন করতে হবে,পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ব্যবসায় যেন ধস না নামে, তাও যেন ঠিকে থাকে।’
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের বিনিয়োগবান্ধব এই সিদ্ধান্ত টেকসইকরণে ব্যাংকিং খাতকে সার্বিকভাবে পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
ফজলে ফাহিম বলেন,আমরা ব্যবসায় খরচ কমানোর দাবি যেমন করি,পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও যেন তার ব্যবসা চালিয়ে নিত পারে, সে দাবিও করছি। এজন্য পুরো ব্যাংকিংখাতে একটি পুনর্গঠন দরকার।
এ কে খান গ্রুপের পরিচালক ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকের ঘরে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সুদহার অনেক বেশি একথা আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। ব্যবসায় খরচ কমানো না গেলে বিদ্যমান বাস্তবতায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে উৎসাহ পাবে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। তবে ৯ শতাংশ সুদহার যেন দীর্ঘমেয়াদি হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন,সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেই কেবল চলবে না,সেটাকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। এমন যেন না হয়, কিছু ব্যাংক সিদ্ধান্ত মানছে,আবার কিছু ব্যাংক দেখা যাচ্ছে সিদ্ধান্ত মেনে ৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ দিচ্ছে না। অথবা উৎপাদন খাত বাদ রেখে খুচরা ব্যবসায় ঋণ চলে যাচ্ছে। তাই ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্সশীট নিয়মিত দেখার পাশপাশি কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে।
৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হলে দেশে বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ঘটবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বলেন, দেশের শিল্পায়ানের স্বার্থে ব্যাংক ঋণ যেন উৎপাদন খাতে যায় এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তারা ঋণ পায়, সেটি অব্যশই নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে, ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায় খরচ অব্যশই কমবে। বিনিয়োগকারিরা উৎসাহিত হবেন। যার ফলে শিল্পায়নের দ্রুত প্রসার ঘটবে। তবে সব ব্যাংক যেন সমানতালে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে এবং কোন ধরনের শর্ত ছাটাই ব্যবসায়ীরা ঋণ পায়, সেদিকে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে কঠোর নজরদারি করতে হবে।