একনেকে ঢাকার প্রাথমিক স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

627

ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস): ঢাকা মহানগরী ও পর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১ হাজার ১৫৯ দশমিক ২১ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে।
রাজধানীর শের-এ-বাংলা নগর এলাকায় এনইসি সম্মেলন কক্ষে চলতি অর্থ বছরে একনেকের ১৪তম বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আজ মোট ৪ হাজার ৬১১ দশমিক ৬২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মোট ৯টি প্রকল্পকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪ হাজার ৪৬৬ দশমিক ১২ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে সংগ্রহ করা হবে। অবশিষ্ট ২৪৫ দশমিক ৫০ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
অনুমোদিত নয়টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নতুন ও অন্য দু’টি সংশোধিত প্রকল্প।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিক্ষা অধিদপ্তর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
মূল প্রকল্পের আওতায় রয়েছে উত্তরায় ৩টি ও পূর্বাঞ্চলে ১১টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, ১৫৪টি প্রাথমিক স্কুলের ২ হাজার ৯৭৫টি কক্ষ ও ৮ হাজার ৫শ’ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ।
পাশাপাশি, ১৭৭টি স্কুলের প্রায় ১ হাজার ১৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার।
এছাড়াও প্রকল্পটির আওতায় ৩৫৬টি সীমানা প্রাচীর সংস্কারের পাশাপাশি ২৫ হাজার ৫৩৬টি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ ও ভরাটকরণ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে, প্রায় ২ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
একনেকের এই বৈঠকে ৯৪৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকগুলোর নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
মূল প্রকল্পে ৫২টি ছাত্রদের হোস্টেল, ৩১টি ভবন, একটি শিক্ষকদের ডরমেটরি, ও ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর নির্মিত হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমানোর উপায় বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে শিশুরা খেলাধূলা করার জন্য আরো বেশি সময় পাবে।
তিনি প্রয়োজনীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষে নেত্রোকোনা ও সুনামগঞ্জ ছাড়াও হাওর এলাকার অবশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরামর্শ দেন।
একনেক সভায় ৯৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘হাওড় এলাকার নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক অন্য একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য ৫২টি আবাসিক হল, ৩১টি বহুতল ভবন, শিক্ষকদের জন্য একটি ডরমেটরি এবং ৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।
চামড়া শিল্পনগরী,চতুর্থ সংশোধিত প্রকল্পে ৬৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় কমানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক সময় চলে গেছে,তবে আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন হবে।
তিনি জানান,চামড়া শিল্পনগরীর নিকটবর্তী এলাকায় যারা চামড়া শিল্প পণ্যের কারখানা করতে আগ্রহী তাদের জমি বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিদের্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেকে ৩৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদিত ‘নারায়নগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্পের বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন,কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে পানগাঁও টার্মিনালের পাশাপাশি আরো একটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে এই প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন করেছে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হচ্ছে-মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪০১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সিলেট সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন,বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসির জন্য অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।