মেহেদির বিধ্বংসী ব্যাটিং-এ জয়ের ধারায় ফিরলো ঢাকা

269

চট্টগ্রাম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : মেহেদি হাসানের বিধ্বংসী ব্যাটিং-এ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে জয়ের ধারায় ফিরলো মাশরাফির ঢাকা প্লাটুন। আজ টুর্নামেন্টের ১৭তম ম্যাচে ঢাকা ৫ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে। নিজেদের মাঠেও কুমিল্লাকে ২০ রানে হারিয়েছিলো ঢাকা। এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬০ রান করে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। জবাবে মেহেদির ২৯ বলে ৫৯ রানের সুবাদে ১ বল বাকী রেখে জয়ের স্বাদ নেয় ঢাকা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং-এর সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা প্লাটুনের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট হাতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। দ্বিতীয় ওভারেই কুমিল্লা উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন ঢাকার অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান। মাশরাফির করা ইনিংসের প্রথম ওভারে পরপর দু’টি বাউন্ডারি তুলে নেয় সৌম্যকে বোল্ড করেন মেহেদি। ৬ বলে ১০ রান করেন সৌম্য।
নিজের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়েছেন মেহেদি। তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমানকে শুন্য হাতে বিদায় দেন তিনি। সাত বল খেলে উইকেটের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় ছিলেন সাব্বির। কিন্তু রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় সাব্বিরকে। কুমিল্লার মিডল-অর্ডারের ভরসা ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান গেল চার ম্যাচে করেছেন ১৯১ রান। আজও তার কাছ থেকে বড় ইনিংসের প্রত্যাশায় ছিলো দল। কিন্তু এবার আর সম্ভব হয়নি। সাব্বিরের মত উইকেটে সেট হবার লক্ষ্যে ধীর ছিলেন মালান। ১৬ বল খেলে উইকেটে সেট হলেও, ১৭তম বলে পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব খানের বলে আউট হন তিনি। ৯ রান করেন মালান।
৯ দশমিক ৩ ওভারে দলীয় ৫৭ রানে তিন ব্য্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে কুমিল্লা। এ অবস্থা থেকে বের হবার পথ খুঁজছিলো তারা। দলের প্রয়োজনীয় সময় এবার জ্বলে উঠেন ওপেনার শ্রীলংকার ভানুকা রাজাপাকসে। কুমিল্লার চার ম্যাচে নিষ্প্রভ ছিলেন রাজাপাকসে। করেছিলেন মাত্র ৮২ রান। তাই বাংলাদেশ ছাড়ার আগে কুমিল্লাকে কিছু দেয়ার তাগাদা ছিলো রাজাপাকসের। এজন্য ইয়াসির আলিকে নিয়ে ঢাকার বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তিনি। ৪১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর মারমুখী হন রাজাপাকসে। চার-ছক্কায় কুমিল্লার স্কোর বোর্ডকে শক্তপোক্ত করতে থাকেন তিনি। তাকে স্ট্রাইক দিয়ে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ইয়াসির। তাই ৬৫ বলে ৪টি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন রাজাপাকসে। হাফ-সেঞ্চুরির পর, পরের ২৩ বলে ৪৬ রান তুলে রাজাপাকসে। এছাড়া ২টি চারে ২৭ বলে অপরাজিত ৩০ রান করেন ইয়াসির। ফলে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬০ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। চট্টগ্রাম পর্ব শেষ করেই জাতীয় দলের জন্য বাংলাদেশ ছাড়বেন রাজাপাকসে। ঢাকার মেহেদি ৪ ওভারে ৯ রানে ২ উইকেট নেন।
জবাবে ১৬১ রানের লক্ষ্যে প্রথম ওভারের শেষ বলে উইকেট হারায় ঢাকার ওপেনার এনামুল হক। শুন্য রানে ফিরেন তিনি। তার বিদায়ে উইকেটে যান মেহেদি। পিঞ্চ হিটার হিসেবে খেলতে নেমে রানের ফুলঝুড়ি ফুটান তিনি। ফলে পাওয়ার প্লে’তে ৬২ রান পায় ঢাকা। এরমধ্যে ১৭ বলে ৪১ রান ছিলো মেহেদি। তামিম ছিলেন সর্তক। ১৭ বলে ১৪ রান দেন দলকে। ২২ বলে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মেহেদি। হাফ-সেঞ্চুরির পর দলীয় ৮৪ রানে আউট হন তিনি। তামিম-মেহেদি দ্বিতীয় উইকেটে ৪৭ বলে ৮৩ রান যোগ করেন। ২টি চার ও ৭টি ছক্কায় ২৯ বলে ৫৯ রান করে আউট হন মেহেদি। নবম ওভারে মেহেদির আউটের পর দলীয় ৮৮ রানে ফিরেন পাকিস্তানের আসিফ আলি ও জাকের আলি। দু’জন রানের খাতা খোলার আগে আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমানের বলে ফিরেন। এরপর মোমিনুল হককে নিয়ে দলকে খেলায় ফেরান তামিম। চতুর্থ উইকেটে ৩৪ রানের জুটি গড়েন তারা। ৪টি চারে ৪০ বলে ৩৪ রান করা তামিমকে শিকার করে কুমিল্লাকে খেলায় ফেরান সৌম্য। তখন জয় থেকে ৩৯ রান দুরে দাঁড়িয়ে ঢাকা। বল ছিলো ২৭টি। এ অবস্থায় ক্রিজে গিয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি। ১৬ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে ঢাকার জয় নিশ্চিত করেন আফ্রিদি। ১টি চারে ২৬ বলে ২৮ রান করেন মোমিনুল। কুমিল্লার মুজিব ২২ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ঢাকার মেহেদি।
এই জয়ে ৫ খেলায় ৩ জয় ও ২ হারে ৬ পয়েন্ট সংগ্রহে আছে ঢাকার। সমানসংখ্যক ম্যাচে ২ জয় ও ৩ হারে ৪ পয়েন্ট রয়েছে কুমিল্লার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স : ১৬০/৩, ২০ ওভার (রাজাপাকসে ৯৬*, ইয়াসির ৩০*, মেহেদি ২/৯)।
ঢাকা প্লাটুন : ১৬১/৫, ১৯.৫ ওভার (মেহেদি ৫৯, তামিম ৩৪, সৌম্য ২/২২)।
ফল : ঢাকা প্লাটুন ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান (ঢাকা প্লাটুন)।