বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : দেশের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজ করার জন্য নৌবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

164

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
হাসিনা-নৌবাহিনী-কোর্স সমাপনী
দেশের মর্যাদা বৃদ্ধিতে কাজ করার জন্য নৌবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নৌবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও অত্যাধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সেসময় তাঁর সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সে সময় জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়ন শুরু করি।’ সেই থেকে একটানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে তাঁর সরকারের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীতে মোট ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ, দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল তথা ‘স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং এন্ড স্যালভেজ কমান্ড’ এবং নৌবাহিনীর বৈমানিক দল বা এভিয়েশান উইং সৃষ্টি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরবার ২০১৭ সালে নৌবহরে ২টি অত্যধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করার ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, নৌবাহিনীতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের সরকার এ বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ৫টি পেট্রোল ক্রাফট ও ২টি লার্জ পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণের মাধ্যমে দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। সেখানে আরও ৫টি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণকাজ চলমান আছে। এছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে ৬টি আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত বড় আকারের ফ্রিগেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নৌবাহিনী তিন বাহিনীর জন্য আইএফএফ সিস্টেম প্রস্তুত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটি কমিশন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌবাহিনীর বৃহৎ দুটি ঘাঁটি বানৌজা শেরে বাংলা এবং সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে এবং নৌসেনা ও নাবিকদের প্রশিক্ষণ ও জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ-অঞ্চলে মোট ২২টি বহুতল ভবন ও সাভারে নৌবাহিনীর টাউনশিপ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে।
নৌবাহিনীর সকল সদস্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক পরিম-ল ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়ন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের আবাসন প্রকল্পসহ সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ইত্যাদি বহুমুখী কার্যক্রমে নৌবাহিনীর ভূমিকা দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর সদস্যদের বীরত্ব এবং বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিনসহ বীর নৌ কমান্ডোদের আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন,আমাদের মুক্তিবাহিনীর দূর্ধর্ষ নৌ-কমান্ডোগণ চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর এলাকায় হামলা চালিয়ে পাকিস্তানী শত্রুবাহিনীর বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছিলো, যা ইতিহাসে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে পরিচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রায় শূণ্য থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় ২টি পেট্রোল ক্র্যাফট নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু নৌবাহিনীর সকল প্রধান ঘাঁটিসমূহকে একযোগে কমিশন প্রদান করেন।’ তিনি বলেন, জাতির পিতা তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে ‘দ্যা টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন, যার ফলে আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু নৌবাহিনীকে বিশ্ব মানের করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একে তাই বিশ্ব মানের করে গড়ে তুলেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে সামরিক বাহিনীর জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকমানের সামরিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন। তিনি বলেন,‘জাতির পিতার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা স¤¦লিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ ২০১৮ সালের ২১শে মার্চ উদ্বোধন করা হয়। এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমে নেভাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সুবিধা আজ আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হয়েছে।’ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যগণ সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এজন্য নৌবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘ জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকদেরকে ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের সুযোগ্য সন্তানেরা দেশ মাতৃকার সেবায় জীবনপন শপথ নিয়ে নৌবাহিনীতে অফিসার পদে কমিশন পেয়েছে। এই গৌরবময় ফলাফলের অংশীদার আপনারাও।’ তাঁদের ছেলে-মেয়েরা যেন ‘বীরত্ব এবং দেশপ্রেমের উদাহারণ হতে পারে’ সেজন্য তিনি সকলের কাছে দোয়াও কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার । তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। যাতে করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ এবং সুন্দর জীবন পেতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক ভাবে আজকে বাংলাদেশ যেমন এগিয়েছে তেমনি রাজনৈতিক ভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। আর ২০২০ সালে আমাদেও মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করবো। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পর্যন্ত সময়কে আমরা মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছি।
পরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী প্রাঙ্গনে একটি গাছের চারা রোপন করেন। তিনি ক্যাডেটদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা সমাপনী কেক কাটেন এবং নব্য কমিশন লাভকারী ক্যাডেটদের ‘অ্যাপলেট’ পরিধান অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে ফটোসেশনে ও অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী পরে দূরবীন দিয়ে নেভাল একাডেমীর পাশে বঙ্গোপসাগরে নোঙর করে রাখা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় এ জাহাজ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করা হয়।
বাসস/এফএন/এএইচজে/১৮২০/কেএমকে