বাসস ক্রীড়া-১৬ : ওয়ালটন-ইমরুলের পর রানার আগুন বোলিং-এ জয়রথ ছুটছে চট্টগ্রামের

431

বাসস ক্রীড়া-১৬
ক্রিকেট-বঙ্গবন্ধু বিপিএল
ওয়ালটন-ইমরুলের পর রানার আগুন বোলিং-এ জয়রথ ছুটছে চট্টগ্রামের
চট্টগ্রাম, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাঁদউইক ওয়ালটন ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানার আগুন ছড়ানো বোলিং-এ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে জয়রথ ছুটছেই চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের। আজ টুর্নামেন্টের ১৪তম ম্যাচে চট্টগ্রাম ১৬ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সকে। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩৮ রানের পাহাড় গড়ে চট্টগ্রাম। ওয়ালটন ২৭ বলে অপরাজিত ৭১ ও ইমরুল ৬২ রান করেন। জবাবে ইংল্যান্ডের ডেভিড মালানের ৩৮ বলে ৮৪ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ২২২ রান করে কুমিল্লা। এই জয়ে ৬ ম্যাচে ৫ জয় ও ১ হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে টেবিলের শীর্ষে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয়টিতে হারের পর টানা চার ম্যাচ জিতলো চট্টগ্রাম। আর ৪ ম্যাচে ২টি করে জয়-হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে থাকলো কুমিল্লা।
হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ায় নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পরিবর্তে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে স্বাগতিক দলের পক্ষে টস করতে নামেন ইমরুল। চট্টগ্রাম পর্বে তার খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাওয়ায় আজও মাহমুদুল্লাহকে ছাড়া খেলতে নামতে হয় চট্টগ্রামকে। একই ইনজুরির কারনে প্রথম দু’ম্যাচেও মাহমুদুল্লাহকে পায়নি চট্টগ্রাম।
তবে এ ম্যাচে ইমরুলের বিপক্ষে টস ভাগ্যে জিতেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক শ্রীলংকার দাসুন শানাকা। প্রথমে চট্টগ্রামকে ব্যাটিং-এ পাঠান শানাকা। দলীয় ২১ রানে প্রথম উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ওপেনার লেন্ডন সিমন্স ৭ বলে ২টি চারে ১০ রান করে আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমানের বলে কাটা পড়েন।
এরপর আরেক ওপেনার শ্রীলংকার আবিস্কা ফার্নান্দোকে নিয়ে মাত্র ৪৯ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক ইমরুল। এর মধ্যে ২০ বলে ৩৮ রান ছিলো ফার্নান্দোর। আর ইমরুলের ছিলো ২৯ বলে ৪৪ রান। বিধ্বংসী রুপে থাকা ফার্নান্দো-ইমরুলের জুটি ভাঙ্গেন কুমিল্লার সৌম্য। ৩টি করে চার-ছক্কায় ২৭ বলে ৪৮ রান করে সৌম্যর বলে আউট হন ফার্নান্দো।
ফার্নান্দো ব্যর্র্থ হলেও, হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ইমরুল। ৩৪তম বলে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে ৬২ রানে আউট হন ইমরুল। ৪১ বলের ইনিংসে ৯টি চার ও ১টি ছক্কা হাকিয়ে শানাকার শিকার হন তিনি। ইমরুলের বিদায়ে উইকেটে গিয়ে নিজের ব্যর্থতা অব্যাহত রাখেন নাসির। ৩ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
ইনিংসের ৩৪ বল বাকী থাকতে দলীয় ১৩৯ রানে নাসিরের বিদায় ঘটে। এরপর জুটি বাঁধেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওয়ালটন ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। শেষ ৩৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯৯ রান যোগ করেন তারা। জুটিতে ওয়ালটন ১৯ বলে ৬০ ও নুরুল ১৫ বলে ২৯ রান করেন। ১৬ থেকে ২০ ওভার পর্যন্ত ওয়ালটন-নুরুলের রান ছিল যথাক্রমে ১০, ১০, ১৮, ২৯ ও ২৫। শানাকার ওভারে ১৮, সৌম্যর ওভারে ২৯ ও আবু হায়দারের ওভারে ২৫ রান নেন তারা। ফলে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩৮ রানের পাহাড় গড়ে চট্টগ্রাম। বড় স্কোর গড়ে আক্ষেপ থাকলো চট্টগ্রামের। মাত্র ২ রানের জন্য বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়তে পারলো না তারা। বিপিএলের ইতিহাসে গেল আসরে ৪ উইকেটে ২৩৯ রানের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিলো রংপুর রাইডার্স। এবারের আসরে আগের ম্যাচে ঢাকা প্লাটুনের বিপক্ষে ৪ উইকেটে ২২১ রান করেছিলো চট্টগ্রাম। আজ নিজেদের রেকর্ড ভেঙ্গে চলতি আসরে সর্বোচ্চ দলীয় রান সংগ্রহ করে চট্টগ্রামই।
২৭ বলে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় ওয়ালটন অপরাজিত ৭১ রান করেন এবং ১৫ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ২৯ রান করেন নুরুল। কুমিল্লার সৌম্য ৪৪ রানে ২টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৩৯ রানের পাহাড় সমান টার্গেট পায় কুমিল্লা। যা করতে পারলে ম্যাচ জয় তো বটেই পাশাপাশি বিপিএলে দু’টি রেকর্ড গড়তে পারবে কুমিল্লা। প্রথমটি বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রান স্পর্শ করা ও অন্যটি সর্বোচ্চ রান চেজ করে জয়ের রেকর্ড। কিন্তু এমন কাজ যে দুরহ-কঠিন, তা বেশ ভালোই জানতো কুমিল্লা।
আর মাঠে নেমে কুমিল্লাকে সেটি হাড়ে-হাড়ে বুঝিয়ে দেন চট্টগ্রামের তরুন বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা। ইতোমধ্যে দু’ম্যাচে সেরা হওয়া রানা, আজ ৩২ রানের মধ্যে কুমিল্লার ৩ উইকেটের পতন ঘটান। শ্রীলংকার ভানুকা রাজাপাকসে ৬, সৌম্য সরকার ১৫ ও সাব্বির রহমান ৫ রান করে রানার শিকার হন।
২৭ বলের মধ্যে কুমিল্লার উপরের সারির ৩ উইকেট পতনের পরও ব্যাট হাতে মারমুখী হন ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ইয়াসির আলি। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকা এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরিয়ে চট্টগ্রামকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার রুবেল হোসেন। ১৭ বলে ২১ রান ইয়াসিরকে থামান রুবেল।
ইয়াসির থামলেও ব্যাট হাতে চড়া মেজাজে ছিলেন মালান। ২৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির পর চার-ছক্কায় নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন মালান। তাতে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগে। কিন্তু মালানের সেঞ্চুরির পথেও কাটা হয়ে দাড়ান রানা। ইনিংসের ১৫তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়েই মালানকে শিকার করেন রানা। ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৮৪ রান করেন মালান।
মালানের মত ব্যাট হাতে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন অধিনায়ক শানাকাও। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি রংপুর রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৩১ বলে অপরাজিত ৭৫ রান করা শানাকা। ৩টি করে চার-ছক্কায় ২১ বলে ৩৭ রান করেন শানাকা। মালানের সাথে পঞ্চম উইকেটে মাত্র ২৬ বলে ৬২ রান যোগ করেছিলেন শানাকা।
এরপর শেষের দিকে, পেসার আবু হায়দারের ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ২৮ রানে বড় ব্যবধানে হারের মুখ থেকে রক্ষা পায় কুমিল্লা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ২২২ রান করতে সক্ষম হয় কুমিল্লা। চট্টগ্রামের রানা ৪ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট নেন। প্রথম ৩ ওভারে ১ মেডেন ৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন রানা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ২৩৮/৪, ২০ ওভার (ওয়ালটন ৭১*, ইমরুল ৬২, সৌম্য ২/৪৪)।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স : ২২২/৭, ২০ ওভার (মালান ৮৪, শানাকা ৩৭, রানা ৪/২৮)।
ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : চাঁদউইক ওয়ালটন(কুমিল্লা)।
বাসস/এএসজি/এএমটি/২৩২০/স্বব