বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নীতি, আদর্শ নিয়ে চলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

228

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সম্মেলন-ভাষণ
নীতি, আদর্শ নিয়ে চলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেয়ার অপচেষ্টা বিভিন্ন সময়ে অনেকেই করেছেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে ইয়াহিয়া ও আইয়ুব খান এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সবার আগে আঘাতটা আওয়ামী লীগের ওপরই এসেছে। কিন্তু জাতির পিতার হাতে গড়া তাঁর আদর্শের এই সংগঠনকে কেউ নিঃশেষ করতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করার অপচেষ্টাও হয়েছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে ভাঙন হয়েছে কয়েকবার। সারাদেশে ঘুরে ধীরে ধীরে দলকে গড়ে তুলেছি। আজ আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সংগঠন।’
তিনি বলেন, ‘আঘাত এসেছে বার বার, জাতির পিতাকেও কতবার হত্যার চেষ্টা, মিথ্যা মামলা এবং ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং ফাঁসির হুকুম পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও তিনি নীতি এবং আদর্শ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই আজকে বাঙালি জাতি একটি জাতিরাষ্ট্রের মর্যাদা লাভে সমর্থ হয়েছে।’
জাতির পিতার ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্টকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারের একটি চুম্বক অংশও এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী-
‘নেতৃত্ব আসে সংগ্রামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কেউ আকস্মিকবাবে একদিনে নেতা হতে পারে না। সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আসতে হবে। তাঁকে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে’- জাতির পিতা এই সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে যান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র দল যে দল এদেশের মানুষকে বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার দিয়েছে। স্বাধীনতা দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি ২০১৩, ১৪ এবং ১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার জন্য বিএনপির তীব্র সমালোচনা করেন।
দেশে জঙ্গিবাদ ও বাংলাভাই সৃষ্টি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ সীমাহীন সন্ত্রাস-নৈরাজ্য’র পাশাপাশি বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে পর পর ৫ বার চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য তিনি বিএনপি-জামায়াত সরকারকে পুনরায় অভিযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এমন একটি দল তারা সরকারে থাকলেও সন্ত্রাস করে আর বিরোধী দলে গেলেও সন্ত্রাস করে।’
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ২৯টি জেলার কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জাতীয় কাউন্সিলের পর পরই বাকি সমস্ত জেলার কাউন্সিলগুলো আমরা করবো। একেবারে তৃণমূল থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলায় কাউন্সিল হবে। এজন্য প্রত্যেকের নামের তালিকা নিয়ে আমাদের একটি সেল কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলা-কাউন্সিলের নতুনভাবে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানান। আর যারা করতে পারেননি তারা দ্রুতই এই কাউন্সিল সম্পন্ন করবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলের মধ্যদিয়েই সংগঠন চাঙ্গা হয়। সংগঠন আরো শক্তিশালী হয়। কাজেই আমরা সেভাবেই সংগঠনকে গড়তে চাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মূল সম্মেলনে নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব থাকে কাউন্সিলরদের ওপর। আগামীকাল সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে তারা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন এবং আমাদের সাংগঠনিক যে কার্যাবলী তা আমরা সেই কাউন্সিল অধিবেশনেই করবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই এক দশকেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নেমে এসেছে এবং ৯৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা যে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন, আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এটা ধরে রেখে আমাদের লক্ষ্য আরো সামনে এগিয়ে যাওয়া।
এক বৈরী পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রাজনীতি আমার জন্য নতুন নয়। স্কুলজীবন থেকে মিছিলে গিয়েছি দেয়াল টপকে। কলেজ জীবনে সরাসরি রাজনীতি করেছি। কলেজে কলেজে ঘুরে সংগঠন করেছি। কলেজে ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। তবে চিন্তাও করিনি আওয়ামী লীগের মতো দলের ভার নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫’র নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। রেহানার পাসপোর্টটিও রিনিউ করতে পারিনি। জিয়া আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করেছিল বলেই জনগণের সাড়া মিলে এবং একরকম জোর করেই দেশে ফিরি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা হয়। বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। খুনিদের পুরস্কৃত করে দল করার সুযোগ দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বানানো হয়। ’
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবনদানকারী নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের শ্রদ্ধা করি। কারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের জন্ম। এ দল ক্ষমতার আলিঙ্গন থেকে প্রতিষ্ঠিত কোনো দল নয়, জনগণের ভেতর থেকে প্রতিষ্ঠিত দল।’
কূটনৈতিক মিশনের সদস্যসহ সম্মেলনে আগতদের এবং আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর রাজনৈতিক প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ আমরা অবশ্যই গড়ে তুলবো, কাউন্সিল অধিবেশনে এই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
বাসস/এএসজি-এফএন/২০৫০/এবিএইচ