স্টোকস ও স্মিথ দারুণ একটা বছর কাটালেন

276

লন্ডন, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ (বাসস/এএফপি): অ্যাশেজের ইতিহাসে স্মরণীয় ইনিংস খেলার আগে ইংল্যান্ডকে প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা পাইয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বেন স্টোকস। আর সিরিষ কাগজ দিয়ে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হবার পর অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেছেন অস্ট্রেলিয় ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ।
তবে ২০১৯ সালে শুধু মাত্র তারাই যে সেরা পারফর্মার ছিলেন তা নয়। এই বছর ক্রিকেট বিশ্বের পাঁচটি স্মরণীয় ঘটনার বর্ণনা নিচে দেয়া হল।
জানুয়ারিতে টেস্ট ইতিহাসের সেরা একটি ইনিংস খেলেছেন কুশাল পেরেরা। ডারবানে অনুষ্ঠিত টেস্টে তার ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক উইকেটের অসাধারণ এক জয় নিশ্চিত করে শ্রীলংকা।
ম্যাচের মধ্যভাগে শেষ উইকেট হিসেবে বিশ্ব ফার্নেন্দো যখন পেরেরার সঙ্গে জুটি বাঁধেন তখনো ম্যাচ জয়ের জন্য ৭৮ রানের প্রয়োজন ছিল লংকানদের। এ সময় ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন পেরেরা। যে কারণে তার শতক পূর্ণ করায় সহায়তা করতে পারাটাই ছিল ফর্নান্দোর বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর চেয়ে বেশী কিছুই করে দেখালেন তিনি। আর ডেল স্টেনের ওভারে পরপর দু’টিসহ ৫টি ছক্কা হাকিয়ে পেরেরা শ্রলীংকাকে পৌঁছে দেন ৩০৪ রানের টার্গেটে।
বিশ্বকাপ ফাইনালের রোমাঞ্চ
জুলাইয়ে লর্ডসে ঘটে যাওয়া শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪৫ বছরের বিশ্বকাপ শিরোপা না পাওয়ার আক্ষেপ দূর করে ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে শেষ পর্যন্ত সমতায় পৌঁছে দেন ৮৪ রানে অপরাজিত বেন স্টোকস। তবে সেখানেও ছিল দারুন এক নাটকীয়তা। আউটফিল্ড থেকে প্রতিপক্ষের ফিল্ডারের ছুড়ে দেয়া বল রানের জন্য দৌঁড়াতে থাকা স্টোকসের ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারী লেন পার হয়ে গেলে বোনাস হিসেবে লাভ করনে বাড়তি চারটি রান। এতেই সমতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয় স্বাগতিক দল।
যার সুবাদে প্রথমবারের মত সুপার ওভারে গড়ায় বিশ্বকাপের ফাইনাল। এখানেও দুই দলের রান সংখ্যা সমান হয়। কারন ওভারের শেষ বলে রান আউট হন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল। শেষ পর্যন্ত বাউন্ডারিতে এগিয়ে থাকায় শিরোপার ছোঁয়া পায় ইংল্যান্ড। আর আদালতের মামলায় খলনায়ক বেন স্টোকস রাতারাতি বনে যান জাতীয় নায়ক।
তারকা ব্যাটসম্যান স্মিথের প্রত্যাবর্তন
১২ মাস আগে সিরিষ কাগজ দিয়ে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হওয়া অস্ট্রেলিয় তারকা স্টিভ স্মিথ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর আগের মত টেস্টে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন কিনা সেটি নিয়ে ছিল সংশয়। কিন্তু এজবাস্টনে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টেই নিজেকে ফের প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তার ১৪৪ ও ১৪২ রানে ভর করে ওই ম্যাচে ২৫১ রানে জয়লাভ করে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। এটি ছিল তার সুচনা মাত্র। সিরিজে ১১০.৫৭ গড়ে ৭৭৪ রান সংগ্রহ করেন স্মিথ।
সিরিজটি ২-২ ম্যাচে ড্র হওয়ায় শিরোপা অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে জোফরা আর্চারের বলে আহত হয়ে স্মিথ সাজ ঘরে ফিরলে টেস্টের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বদলী খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন মার্নাস লাবুশেন।
হেডিংলিতে স্টোকসের নায়েকোচিত পারফর্মেন্স
হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে জয়ের জন্য ৩৫৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানেই সবক’টি উইকেট হারিয়ে বসা স্বাগতিক ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে জ্যাক লিচ যখন স্টোকসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তখনে জয় থেকে ৭৩ রান দূরে ছিল তারা। কিন্তু স্টোকস রক্ষনাত্মক কৌশলের পাশাপাশি আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে অপরাজিত ১৩৫ রান সংগ্রহের মাধ্যমে দলকে এক উইকেটের জয় এনে দেন।
পাকিস্তানে টেস্ট ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন
গত সেমবার খারাপ আবহাওয়ার কারণে ড্র হয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচটি ছিল দীর্ঘ এক দশক পর পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম টেস্ট। ২০০৯ সালে সফরকারী শ্রীলংকান দলের উপর সশস্ত্র হামলার কারণে শীর্ষস্থানীয় দলগুলো পাকিস্তান সফর থেকে বিরত ছিল।
ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আবিদ আলী পাকিস্তানের প্রথম ক্রিকেট ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ও আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটের অভিষেকে শতক হাকানোর বিরল গৌরব অর্জন করেন।
২০২০ সালে যা দেখা যাবে
অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে পুরুষ ক্রিকেটের টি-২০ বিশ্বকাপ। স্বাগতিকদের লক্ষ্য থাকবে প্রথমবারের মত শিরোপাটি ঘরে তোলা। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তৃতীয়বারের মত শিরোপাটি নিজেদের করার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামবে ওই আসরে।