বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে একটি আধুনিক-সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

139

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-এনডিসি-ভাষণ
সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে একটি আধুনিক-সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে : প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিনবাহিনী প্রধানগণ, মুখ্য সচিব, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অধ্যাপকবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মিলিটারি এ্যাটাচিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সমাদৃত এই ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ অত্যন্ত সীমিত পরিসরে তাঁর সরকারের হাত ধরে এর যাত্রা শুরু করেছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৫ জন নিয়ে এর যাত্রা শুরু মাত্র দুই কোটি টাকা ব্যয়ে।’ তিনি বলেন, ‘সেটাও আমার অবশ্য চ্যালেঞ্জ ছিল যে, সবকিছু টাকার মাপে হয় না। শুরুটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। একবার শুরু করলে এটি একদিন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করবে এবং আজকে সেটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ স্ট্যাটেজিক স্তরে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অসামরিক পরিমন্ডলেও যথেষ্ট সমাদৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তাগণ এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভূত অবদান রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, এনডিসি এবং এএফডব্লিউসি কোর্স ছাড়াও এনডিসি কর্তৃক পরিচালিত ‘ক্যাপস্টোন কোর্স’- এর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এমনকি দেশের সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, সম্পাদক, সাংবাদিক, অধ্যাপক, সংসদ সদস্যসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশি নাগরিকবৃন্দ বর্তমানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশগ্রহণ করছেন। ফলে আন্তর্জাতিক পরিপন্ডলে একটি চমৎকার সংহতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি কামণা করে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে তাঁর সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সবধরণের সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে এটাতো আমি করবোই, কেননা এটা আমার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। কাজেই এর প্রতি আমার একটা আলাদা আন্তরিকতা রয়েছে।’ সশস্ত্র বাহিনীকে আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা দেশের দুর্যোগকালীন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এর ভূমিকার ভূয়সী প্রসংসা করেন এবং তা ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এদেশের জনগণের সেবা করাটা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। এই সাধারণ মানুষের অর্থেইতো আমাদের বেতন-ভাতা সবকিছু। কাজেই তাঁদের জীবনযাত্রাটা সুন্দর করাই আমাদের লক্ষ্য।’
বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকার একটি পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে দেশকে পরিচালিত করছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি। আশু করণীয় কি- সেটাও আমরা ঠিক করেছি এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে কিভাবে গড়ে তুলবো সে পরিকল্পনাও আমরা প্রণয়ন করেছি।’ ভাত-মাছ, শাক-সবজী, ফলমূল, তরিতরকারী উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে উদ্বৃত্ত খাদ্যের দেশে পরিণত করায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে এজন্য গবেষণায় অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং কৃষি উপকরণকে সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়ায় কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা । জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির আলোকে তাঁর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সফল কর্মসূচি যেমন গৃহহীনকে ঘর প্রদানে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’সহ দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ পুণর্গঠনকালেই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যেতে সমর্থ হন। যেখান থেকে আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছি। যা আমাদের ধরে রাখতে হবে আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত। অবশ্য সেই ক্রাইটেরিয়া ইতোমধ্যেই অর্জিত হওয়ায় আমরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। ২০২১ সালে স্বাধীনতার জয়ন্তীতে দেশকে মধ্যম আয়ের এবং২০৪১ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো।’ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর এবং ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং আগামীর প্রজন্মকে সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য নেদারল্যান্ড সরকারের সহযোগিতায় শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগের ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দুঃখ ও দারিদ্র্য আমরা দেখেছি ভবিষ্যত প্রজন্মকে তা যেন আর দেখতে না হয় সেজন্য আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে রেখে যেতে চাই এবং উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা যেন অক্ষুণœ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এনডিসি ও ডিএসসিএসি এর পরিচালনা পর্ষদের যৌথ সভাতেও যোগদান করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/এএইচজে/১৮২০/-কেএমকে