খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী

257

ঢাকা , ১৫ ডিসেম্বর , ২০১৯ ( বাসস ) : পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশ নির্ধারণ করতে নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করাও জরুরি ।
তিনি আজ সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাই’ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি ।
বক্তব্য রাখেন ক্যাব এর সভাপতি গোলাম রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর বাংলাদেশ কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এবং প্রজ্ঞা’র ট্রান্স ফ্যাট বিষয়ক প্রকল্পের টিমলিডার মো: হাসান শাহরিয়ার।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরাম এর সভাপতি তৌাফিক মারুফ এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডাঃ এ.এইচ.এম. এনায়েত হোসেন, প্রজ্ঞার, নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ।
হাবিবে মিল্লাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ২০২৩ সালের মধ্যে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবেন। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করতে নীতি প্রণয়নে পূর্ণ সহযোগিতার আশ^াসও তিনি দেন।
আব্দুল মালিক বলেন, এখন ৫০ বছর বয়সের নিচে প্রচুর মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যার অন্যতম কারণ ট্রান্স ফ্যাট। এটি নির্মূল করা হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর বছর ২ লক্ষ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে। হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ। খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) নামক একধরনের চর্বি জাতীয় পদার্থ ধমনির রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে।
আলোচনায় সভায় বক্তারা বলেন, মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে ‘ভালো’ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর মতে, বিশে^ প্রতিবছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সাধারণত ভাজা পোড়া ও বেকারি খাবারে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট থাকে। ভেজিটেবল অয়েল (পাম, সয়াবিন ইত্যাদি) এর সাথে হাইড্রোজেন যুক্ত (হাইড্রোজেনেশন) করলে তেল জমে যায় এবং ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়। এই পারশিয়াল হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও আমাদের দেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। ভাজা পোড়া খাদ্যে একই তেল উচ্চ তাপমাত্রায় বারবার ব্যবহারের কারণেও খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট সৃষ্টি হয়।
সভায় বলা হয় বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল সংক্রান্ত কোন নীতি না থাকায় খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি রয়ে যাচ্ছে, যা হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়ংশে কমিয়ে আনা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (লক্ষ্য ৩.৪) অর্জন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধসহ জনস্বাস্থ্যের কার্যকর উন্নয়নের জন্য ট্রান্স ফ্যাট নির্মূলের কোনো বিকল্প নেই।