আগামীকাল বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী

221

ভোলা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : আগামীকাল সোমবার বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য বীরত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভুষিত করা হয়। তিনি ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শাহীদ হন। সেদিন তিনি একাই লড়াই করে সহযোদ্ধাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। দিবসটি পালনে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মোস্তফা কামালের পিতা হাবিলদার মো. হাবিবুর রহমান ও মাতা মালেকা বেগম। ৫ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর স্ত্রীর নাম পিয়ারা বেগম। ছোট বেলা থেকেই স্কুলের পড়াশোনার চেয়ে ভালো লাগত সৈনিকদের কুচকাওয়াজ ও মার্চ করা। নিজেও স্বপ্ন দেখেন সৈনিক হওয়ার। ১৯৬৭ সালে কাউকে কিছু না বলে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ক্রমশই স্বাধীনতার দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হতে থাকে। ১৯৭১ সালে মোস্তফা কামাল ২৪ বছরের যুবক। তিনি ৭ মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে আন্দোলিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সিপাহী মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ১টি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। সংখ্যায় বেশি ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর সাথে মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছিলো অদম্য মনোবল। ১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছেয়ে রইল। ১১টার দিকে শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। একইসাথে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুঁড়তে শুরু করল। শুরু হলো সম্মুখ যুদ্ধ। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগল। মুহুর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন স্টেনগান।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আধুনিক অস্ত্র ছিলোনা। সংখ্যায়ও অনেক কম তারা। আর পাকিস্তানি সৈন্যরা সংখ্যায় ছিলো বেশি। তারা ভারি অস্ত্র শস্ত্র সজ্জিত। সামনা-সামনি যুদ্ধ করে মরতে হবে, নয় পিছু হটতে হবে। কিন্তু পিছু হটতে হলেও সময় দরকার। ততক্ষণ অবিরাম গুলি চালিয়ে শত্রুদের আটকিয়ে রাখতে হবে। কে নেবে এই মহান দায়িত্ব? এমন সময় আরো একজন মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। ততক্ষণে মোস্তফা কামাল সকল সহযোদ্ধাদের সরে যেতে বললেন। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে চালাতে লাগলেন স্টেনগান। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে যেতে না চাইলে তিনি আবারো সবাইকে নিরাপদে যেতে বলেন। অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থমকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ কয়েকজন পাক সৈন্য। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা সাবধানে পিছু হটেছেন।
একসময় মোস্তফা কামালের গুলি শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একটি গুলি লাগে তার বুকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মৃত্যুবরণ করেন মোস্তফা কামাল। তার এমন বীরত্বের কারণে সহযোদ্ধাদের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। দরুইনের মাটিতে সমাহিত করা হয় জাতির এই শ্রেষ্ঠ বীরকে। তিনি আমাদের গর্ব ও গৌরব।