কুমিল্লায় নির্মিত ভাস্কর্যগুলো মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা স্মৃতি বহন করছে

462

কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার জানা-অজানা অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত রাখতে জেলা সদর, মহানগর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত হয়েছে অনেক ভাস্কর্য, স্মৃতিফলক এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে অনেক বধ্যভূমি ও গণকবর।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সেনাদের স্মরণে কুমিল্লা সেনানিবাসের প্রধান ফটকের পাশে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ ‘যাদের রক্তে মুক্ত স্বদেশ’। ১৯৭৪ সালের ১১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন। স্মৃতিসৌধের নকশা ও মডেল করেছেন স্থপতি আবদুর রশিদ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন। সেইসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বগাঁথা স্মরণ করে কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার প্রশাসনিক ভবনের সামনে রানীর দীঘির পাড়ে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স নির্মাণ করেছে ‘স্বাধীনতা সৌধ’। ১৯৯৫ সালের ২৬ মার্চ এ স্বাধীনতা সৌধের ফলক উন্মোচন করেন শহীদ যতীন্দ্র কুমার ভদ্রের স্ত্রী। বিনা পারিশ্রমিকে এর ডিজাইন ও মডেল তৈরি করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কুমিল্লা জেলা প্রশাসক একেএম শামসুল হক খান স্মরণে এবং কুমিল্লা পুলিশ লাইনে দেশের একমাত্র শহীদ কুমিল্লা পুলিশ সুপার মুন্সি কবির উদ্দিন স্মরণে তাদের নামে নির্মিত হয়েছে ‘স্মৃতি তোরণ’ ও ‘স্মৃতি ভাস্কর্য’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের বাসভবন প্রাঙ্গণে নির্মিত হয়েছে ‘শহীদ জেলা প্রশাসক শামসুল হক মঞ্চ’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত হয়েছে কুমিল্লা অঞ্চলের ৪ শতাধিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সম্বলিত বড় আকারের ‘স্মৃতি স্তম্ভ’। জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেতিয়ারায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে ‘শহীদ স্মৃতি সৌধ’।
জেলার লাকসাম রেলওয়ে জংশনের পূর্ব দিকে রয়েছে একটি বধ্যভূমি। এছাড়াও নাঙ্গলকোটের মৌকারা, হাসানপুর পুকুর পাড়ে, হোমনা সদরের কলেজ প্রাঙ্গণে, চৌদ্দগ্রামের বেতিয়ারা, বরুড়ার পয়ালগাছা নারায়ণপুরে, সদর দক্ষিণের বাগমারা দক্ষিণ বাজারে, চান্দিনার ফাউই ও কুমিল্লা সদরের কৃষ্ণপুর ধনঞ্জয়ে, শহরের রামমালা সড়কের সার্ভে ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি গণকবর। অপরদিকে দেবিদ্বার, কোটবাড়ি রুপবানমুড়া, ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট ও সদরের রসুলপুরে রয়েছে বধ্যভূমি।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ভাস্কর্য বহন করে ইতিহাস। কুমিল্লা অঞ্চলে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যগুলোও ঠিক তেমনই বহন করে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের একেকটি গৌরবঁগাথা। বিজয়ের মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত স্মৃতিফলক ও ভাস্কর্যগুলো সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের কল্যাণে কাজ করতে উজ্জীবিত রাখছে এবং বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে তাদের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রেরণা জোগাচ্ছে।