জিয়া ছিলেন মোস্তাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত : প্রধানমন্ত্রী

1293

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার অভিযোগ পূর্ণব্যক্ত করে বলেছেন, খন্দকার মোস্তাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক ছিলেন জিয়া।
তিনি বলেন, ‘জিয়া মোস্তাকের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক ছিলেন বলেই তিনি তাকে সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জিয়া জড়িত না-ই থাকবেন, তবে খন্দকার মোস্তাক তাকে কেন সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন?’
প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেলে রাজানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাধীনতাকে সমুন্বত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ভবিষ্যতে জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকতে তরুণদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশবাসীকে মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশের মাটিতে মীর জাফর ও খন্দকার মোস্তাকের মতো বিশ্বাসঘাতকরা জন্মেছিলেন এবং যুগে যুগে ‘খুনী জিয়ার’ মতো মানুষ আসতেই থাকবে।
তিনি বলেন, ‘তাই যুবসমাজসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দায়িত্ব নিতে হবে এবং কেউ যেন মানুষের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
এছাড়া অনুষ্ঠানে শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, ঢাকা উত্তর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তব্য প্রদান করেন।


অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে অন্যান্য শহীদ, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খন্দকার মোস্তাক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ঘোষণা করেছিলেন। আর জিয়াউর রহমান সেই অধ্যাদেশকে আইন হিসেবে পাস করেন।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান লংঘন করে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত শুরু হয়। তিনি জেল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেন এবং ৭ খুনের দন্ডপ্রাপ্ত আসামী শফিউল আলম প্রধানকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন।’
শেখ হাসিনা ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষকে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ উল্লেখ করে বলেন, তৎকালীন খাদ্য সচিব আব্দুল মোমেন ছিলেন এ দুর্ভিক্ষের মূলহোতা। ‘আব্দুল মোমেনকে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য করা হয়’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরে এ ধরনের আরো অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়। এর কারণ ছিল বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত করা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর হত্যাকারীরা বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ইসলামিক প্রজাতন্ত্র রাখে। কিন্তু জনগণ এটি গ্রহণ না করায় তারা তা ধরে রাখতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক্ষেত্রে গবেষণা করা হলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ একটি নিছক হত্যাকান্ড ছিলো না। আমাদের বিজয় নস্যাৎ ও দেশকে ধ্বংস করার জন্য এটা করা হয়েছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জনপ্রতিনিধিদের হত্যা, থানা লুট ও পাটের গুদামে আগুন দেয়ার মতো বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালানো হয়।
সরকার প্রধান বলেন, সে সময় কিছু লোক তাদের লেখালেখির মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করেন। ‘কিন্তু আমি সন্দীহান যে তারা সদ্য স্বাধীন দেশের নাজুক পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কিনা। আমার মনে হয়, তারা এটি উপলব্ধি করতে পারেনি, না হয় কোনো কোনোভাবে তাদের অন্য কোথাও যোগ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রপাগান্ডার পরিণতি কি হতে পারে তা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান অনেক হত্যাকান্ড ও ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। ‘জিয়ার সামরিক শাসনের আমলে একটার পর একটা অভ্যুত্থান হয় এবং এসব অভ্যুত্থানে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়। এসব সামরিক কর্মকর্তারা জানতেনই না তাদের অপরাধ কি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা হয় এবং জনগণকে ভুল পথে চালিত করতে একটি মিথ্যা ইতিহাস রচনা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু কেউ সত্যকে চিরতরে মুছে ফেলতে পারে না, এটি এখন পুরো বিশ্বসহ বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ পেয়েছে। তিনি দৃঢতার সঙ্গে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে কেউ এটিকে মুছে ফেলতে পারবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুদ্ধিজীবী যারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের নাম মুছে ফেলতে অশুভ চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি, কারণ আত্মত্যাগ কখনই বৃথা যায় না, এবং এটি এখন বাংলাদেশে প্রমাণিত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে মর্যাদার সাথে এগিয়ে যেতে পারলে, শহীদদের আত্মত্যাগ ও মহান অবদান চিরকালের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীন বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন, সেই দেশটি এখন ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আবারও এগিয়ে চলছে।’


প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কখনই সহ্য করেনি যে, তারা বাঙালির কাছে পরাজয় স্বীকার কিংবা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে।
তিনি বলেন, ‘এ কারণেই তারা (পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী) তাদের আত্মসমর্পণের পূর্বে সারা দেশে গণহত্যা চালিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিংবা একটি সমাজ গঠনে যারা কাজ করে সেইসব শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবীদের নির্মূল করার চেষ্টা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের কিছু কুলাঙ্গার যারা বাঙালি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তারাই এই জঘন্য হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল।
তিনি বলেন, তারা পাকিস্তানি সৈন্যদের পথ দেখিয়েছিল এবং তাদের হাতে বুদ্ধিজীবীদের তুলে দিয়েছিল এবং এইভাবে তারা একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল’।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শাওন মাহমুদ বলেন, ‘যখন আমি আওয়ামী লীগের কোন কর্মসূচিতে আসি আমার কাছে মনে হয় আমি আমার বাড়িতে এসেছি।’ যেসব লোক আমার পরিচিত তারা আমাকে ঘিরে রাখে।’
বঙ্গবন্ধুকে ‘অলৌকিক নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করে শাওন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমার অভিভাবকদের পিতা, আমার পিতা এবং আমার সন্তানদের পিতা।’
তিনি বলেন, আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে দেখি তখন তিনি আমাদের আপা এবং আমাদের সন্তানদের বন্ধু হিসেবে দেখি। সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন কোন পরিবার নেই যেসব পরিবারের সবাই একযোগে শেখ হাসিনাকে আপা ডাকে না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে কিছু অলৌকিক লোক যেমন শিক্ষক, সঙ্গীত শিল্পী, কবি, লেখক বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশ স্বাধীন হতে যাচ্ছে।
দেশকে কলুঙ্কমুক্ত করতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর দুঃসাহসিক নেতৃত্বের কারণেই এটা করা সম্ভব হয়েছে।
শাওন উল্লেখ করেন বাংলাদেশ স্বাধীনের ঠিক আগে তাঁর পিতা বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ শহীদ আলতাফ মাহমুদকে পাকিস্তানের দখলদার বাহিনী নৃসংশভাবে হত্যা করে।