বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- বার্ষিক কর্মসম্পাদন-ভাষণ
২০৪১ সালের কর্মপরিকল্পনায় আমলাদের চিন্তা-ভাবনা সন্নিবেশের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কর্মকান্ডে দক্ষতা বৃদ্ধি ও গতিশীলতা আনয়ন, সেবার মানোন্নয়ন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই তাঁর সরকার ফলাফলভিত্তিক সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা জিপিএমএস চালু করেছে।
তিনি বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূলত তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা দলিল। একইভাবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবগণ সংযুক্ত দপ্তর বা সংস্থাসমূহের সঙ্গে এবং দপ্তর বা সংস্থাসমূহের প্রধানগণ মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ, এ সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহীত কার্যক্রমসমূহ এবং এ কার্যক্রমের ফলাফল পরিমাপের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এসডিজি’স ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স-২০১৮’র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসডিজি’স ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ কনফারেন্স-২০১৮ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কনফারেন্সের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা, এর বাইরে আমাদের নিজেদের দেশের জন্য কি করণীয় সেটাও সঙ্গে সঙ্গে আপনারা মূল্যায়ন করবেন। যাতে আগামী দিনের পরিকল্পনায় সেটাকে সম্পৃক্ত করে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যায়।
তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, আমার পরিস্কার কথা- প্রত্যেকটি গ্রাম হবে এক একটি শহরের মত, প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ যেন সকল নাগরিক সুবিধা পায়- সেটা আমরা নিশ্চিত করবো।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একটি মানুষও সেখানে অশিক্ষিত থাকবে না, একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, একটি মানুষও ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না বা স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হবে না। প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে।
সরকার প্রধান, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে আরো শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তাঁর সরকার ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এ নীতিমালার আলোকে এবারই প্রথম সিনিয়র সচিব বা সচিব পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০১৭-১৮ প্রদান করা হচ্ছে। রাষ্ট্রে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় সকল সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছেন। এ পুরস্কারপ্রাপ্তিতে সচিব, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে তিনি অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক এবং এমডিজি বাস্তবায়নে যেমন দক্ষতা দেখিয়েছি আশাকরি এসডিজি বাস্তবায়নেও তেমন দক্ষতা দেখাতে পারবো। কারণ, আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং প্রেক্ষিত পরিকল্পনাগুলো একে অপরের পরিপূরক। এর বাইরে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশের মানুষের জন্য যেসব পরিকল্পনা তাঁর সরকার নিয়েছে সেগুলোও বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলেই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো।
লক্ষ্য অর্জনে সফলকাম হওয়ায় জন্য কর্মক্ষেত্রে বিশ্বাস ও আস্থা বজায় রেখে কাজ করাটাও জরুরি বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে সকল বাধা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই একটা সিদ্ধান্তের পর বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে মন মানসিকতা পাল্টে গেছে।’
দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ আর ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বে এখন সম্মানের চোখে দেখা হয়, আপনারা নিজেরাও বিদেশে গেলে এই তফাৎটা দেখতে পারেন, বলেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, বিশ্বাস, দৃঢ়তা এবং সততা না থাকলে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হত না। আর সে সিদ্ধান্তের পরই বাংলাদেশের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন- আমারতো দেশের মাটি আছে, মানুষ আছে-তা নিয়েই আমি শুরু করবো এবং সেভাবেই শুরুর পর একটি দেশকে যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি।
শেখ হাসিনা বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলেন, আমি জানি ছোট দেশ, ১৬ কোটি মানুষ। তবে, এই কঠিনকেই জয় করার ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের আছে। কারণ, জাতির পিতা বলে গেছেন-‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭০০/আরজি