বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩ : শহরে মহিলাদের জন্য গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো দরকার

151

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩
গণপরিবহন-নারী
শহরে মহিলাদের জন্য গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো দরকার
ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : দেশে বিশেষ করে শহরে গণপরিবহন একটা বড় সমস্যা। আর মহিলাদের জন্য এ সমস্যা আরো প্রকট। শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রীদের ছাড়াও কর্মজীবী অনেক নারী রয়েছেন যাদের অনেককেই গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদেরকে নিয়মিত মেকাবেলা করতে হয় নানাবিধ সমস্যা। নিয়মিতভাবে এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হওয়াদের একজন মোহাম্মদ পুরের আরজু। উত্তরার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আরজু। দুই বাচ্চার স্কুল মোহাম্মদপুর তাই সেখানেই বাসা। আর তাই অফিসে যাওয়া-আসার জন্য গণপরিবহনই ভরসা। কিন্তু প্রায় সময়ই বাস পান না তিনি। পেলেও উঠতে পারেন না। আর তাই প্রায় দিনই অফিস পৌঁছতে দেরী হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে সিএনজি চালিত অটো রিকশা অথবা অ্যাপস ভিত্তিক মোটর যান ব্যবহার করতে হয় তাকে। অফিস থেকে ফেরার সময়ও একই দূর্ভোগ পোহাতে হয় আরজুকে।
তেত্রিশ বছর বয়সী মাহি সপরিবারে থাকেন মিরপুর ১০ নম্বরে। আজ প্রায় দশ বছর ধরে সেখান থেকে যাতায়াত করছেন কর্মক্ষেত্র মতিঝিলে। সেখানে একটি বীমা কোম্পানীতে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। তারও অফিস যাতায়াতে প্রতিদিন পোহাতে হয় নানা যন্ত্রণা। তাই তিনি চেষ্টা করেন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে বাসা থেকে বের হতে। এই সময়টায় একটু ফাঁকা থাকে বাস। রাস্তায়ও মোটামুটি যানযট কম থাকে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে মতিঝিল পৌঁছানোর পর। কারণ অফিস শুরুর প্রায় এক থেকে আধা ঘন্টা আগে পৌঁছে যান তিনি। এ সময় তিনি অফিসের নিচেই বসে থাকেন।
শুধু আরজু বা মাহি-ই নয়। অধিকাংশ চাকরীজীবী নারীকেই প্রতিনিয়ত পোহাতে হচ্ছে এ দুর্ভোগ। বিশেষ করে অফিস টাইমে এবং অফিস শেষ হওয়ার পর এ দুর্ভোগ বেড়ে যায় কয়েক গুন।
আরজু বলেন, প্রায় দিনই আমি বাসে উঠতে পারি না। প্রচন্ড ভিড় থাকে। আর অটো রিকশা বা মোটরসাইকেলে যেতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়। যা বেতন পাই তার অর্ধেকই চলে যায় এই যাতায়াতে।
তিনি বলেন, আবার মোটর সাইকেলে উঠতে ভয় লাগে। কারণ প্রায় সময়ই তারা বেপরোয়াভাবে চালায়। যার কারনে অটো রিকশাই ভরসা।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে কর্মজীবী নারীদের ভোগান্তি আর হয়রানি অন্যদের তুলনায় বেশি। চালকের লাইসেন্স না থাকা, গাড়ির ফিটনেস না থাকাসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। ফলে চলাচলে নারীদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কর্মজীবী নারীদের অটো রিকশায় চলতে গিয়ে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। অথবা অনেক সময় দাঁড়িয়ে ঠেলাঠেলি করে কোনোমতে গণপরিবহনে উঠতে হচ্ছে।
মাহি বলেন, যে কোম্পানীতে আছি সেখানে খুব বেশি বেতন পাই না। তাই প্রায় সময় আমি ভোরে বাসা থেকে বের হয়ে যাই। কারন প্রতিদিন যদি আমি সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন ব্যবহার করি তবে বেতনের প্রায় পুরোটাই চলে যাবে যাতায়াতে। যেদিন বাসা থেকে বের হতে দেরী হয় সেদিন অনেক কষ্টে গাড়িতে উঠতে হয়। এজন্য অনেকবার অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হতে হয়েছে। কারন প্রায় সময়ই বসার কোন সিট পাইনা। মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট আসনগুলোতেও পুরুষরা বসে থাকে। হেলপার তাদের উঠে মহিলাদের আসন ছেড়ে দিতে বললেও উঠে না। আবার উল্টো ঝগড়া লাগিয়ে দেয়। যার ফলে দাঁড়িয়েই যেতে হয়।
কর্মজীবী আরেক নারী ইসমত আরা অভিযোগ করেন, দেশের বড় শহরগুলোতে বিশেষ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে নারী কর্মজীবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ছে না। আর যেগুলো আছে সে সব পরিবহনে সকাল বেলা এবং বিকেল পাঁচটার পর উঠতে যাওয়া মানে যুদ্ধ করা। অধিকাংশ নারীই তখন বাসে উঠতে পারেন না। আমি নিজেও প্রায় সময় অফিস থেকে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে বাসায় আসি। এছাড়া রয়েছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। কোনভাবে বাসে উঠতে পারলেও সিট পাওয়া তো দূরের কথা ভালোভাবে দাঁড়ানো পর্যন্ত যায় না।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গণপরিবহনের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়ে চলেছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে এই দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে নারীদের ভোগান্তি একটু বেশি।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে ১৯টি বাস চলে নারীদের জন্য। এসব গণ পরিবহন চলে সরকারী ব্যবস্থাপনায়। এছাড়াও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় চলে দোলন চাঁপা নামে আর একটি বাস চলে নগরীর মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। কিন্তু কর্মজীবী নারীর তুলনায় এসব গণ পরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কম। কারন অন্যান্য বাসগুলোতে নারীদের জন্য যে আসন বরাদ্দ তা অপ্রতুল। আবার অধিকাংশ সময় এসব বাসে উঠা কষ্টসাধ্য। উঠলেও আসন পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ফিটসেনবিহীন গাড়ি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের জন্য ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হওয়ায় রাস্তায় গাড়ীর সংখ্যাও কম। তবে আশার কথা হচ্ছে সরকার যাত্রীদের বিশেষ করে নারীদের যানবাহনের ভোগান্তি কমাতে আরো বেশ কিছু বাস নামাবে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/আহো/১৩০৫/-স্বব