বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : কাঁকড়া চাষ নারীকে স্বাবলম্বী করেছে

145

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
কাঁকড়া চাষ নারীকে স্বাবলম্বী করেছে
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বরগুনার পাথরঘাটার নারীরা কাঁকড়া চাষে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ করে পাথরঘাটা উপজেলা ‘মাছের রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে কাঁকড়ার অঞ্চল নামেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
মাছ ও ধানের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় কাঁকড়া চাষির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,উপকুলীয় অঞ্চলের ৪৩ হাজার নারীকে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। তাদের জীবিকা উর্পাজনের প্রশিক্ষণ ও পন্য বাজারজাতকরণের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হবে।এ জন্য সরকার ২৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ বছরের আগস্ট মাসেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিগত বছরগুলোতে এ দেশ থেকে ৫ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া তাইওয়ান, কোরিয়া, হংকং, চীনে রফতানি হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী উপাদানগুলোর মধ্যে কাঁকড়ার অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ দেশের রপ্তানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার স্থান। আমাদের দেশে বর্তমানে উৎপাদিত কাঁকড়ার পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও কাঁকড়া রপ্তানি থেকে প্রতি বছর ২৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। প্রজাতিভিত্তিক মিঠা ও লোনা পানির উভয় পরিবেশে কাঁকড়া বেঁচে থাকে। মিঠা পানির কাঁকড়া আকারে ছোট এবং লোনা পানির কাঁকড়া আকারে বেশ বড় হয়। এ দেশে প্রাপ্ত সর্বমোট ১৫টি প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে ৪ প্রজাতির সাধু বা মিঠা পানির কাঁকড়া এবং ১১টি প্রজাতি সামুদ্রিক। সামুদ্রিক প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁকড়া হলো ম্যাডক্র্যাব। এটি অন্যান্য প্রজাতির কাঁকড়ার তুলনায় আকারে সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, উপকুলীয় অঞ্চলের নারীদের জীবিকা উর্পাজনে সহায়তা প্রদানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে,কাঁকড়া চাষ, সবজী চাষ, তিলচাষ ও লবণক্ততা সহায়ক নার্সারী তৈরির প্রশিক্ষণ ।
পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের পশ্চিম কাঠালতলী গ্রামের সুদীপা বর্মণ বয়স ৩৩ বছর। দু সন্তানের মা। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে কাঁকড়ার পেছনে। সুদীপা জানান, মাছ ধরা ও ধান চাষের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়াতে কাঁকড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আহরণকারীরা নদী-নালায় ছোট ছোট কাঁকড়া ধরছেন। প্রায় ৩০ জনের একটা দল যায়, মাঝে মাঝে তার মধ্যে সুদীপাও থাকেন। তাদের কয়েকটি গ্রামে নদী থেকে কাঁকড়া ধরে চাষীদের খামারে দেয় প্রায় ৫ হাজার মানুষ। খামারে বাচ্চা কাঁকড়া বড় করা এবং খোলস পাল্টানো ‘জাত কাঁকড়া’ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাঁকড়ার বিক্রয়যোগ্য আকার পর্যন্ত মোটাতাজাকরণ করা হয়। পাথরঘাটার বিভিন্ন ছোট ছোট খাল, বলেশ্বর ও বিষখালী নদীতে আহরণকারীরা কাঁকড়া ধরে চাষিদের কাছে বিক্রি করে। আহরণকারীদের কাছ থেকে বড় এবং খোল পাল্টানো কাঁকড়া ক্রয় করে তা তাদের নিজস্ব ঘেরে চাষ করে। খাবার হিসেবে দেয় বাগদা চিংিড়ির মাথা , তেলাপিয়া মাছ, গরু ছাগলের ভ’ড়ি। একটি কাঁকড়া পুকুর বা ঘেরে রেখে তিনমাস পরই বিক্রি করা যায়। ১০ টাকা ২৫ পয়সায় বাচ্চা কেনেন। বিক্রি করেন ২৫০ টাকায়। খরচ হয় কাঁকড়া প্রতি ৪৫ টাকা।
উন্নত পদ্ধতিতে কাঁকড়ার চাষ ও মোটাতাজাকরণে পাথরঘাটায় দেড় শতাধিক চাষি রয়েছে। যাদের আয়ের উৎসই এখন কাঁকড়া চাষ। আর এ চাষিদের কারিগরী সহযোগিতা করছেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সংগ্রাম’।
পাথরঘাটায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,এখানে কাকঁড়া চাষ নারীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। এর দুটো কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভবান হওয়া যায় তেমনি খাদ্য হিসেবেও কাঁকড়া পাওয়া যায়।
বছরে প্রাকৃতিক উৎস হতে সংগ্রহ ও চাষের মাধ্যমে যে পরিমাণ কাঁকড়া পাওয়া যায় তার ৯৫ ভাগ কাকড়া বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়ে থাকে। আর এর সিংহ ভাগই েেজাগান দিচ্ছে পাথরঘাটার কাঁকড়া। সাধারণ শক্ত খোলসযুক্ত ও নরম খোলসযুক্ত এ দুই ধরনের কাঁকড়া রফতানি করা হয়। রফতানিকরা কাঁকড়ার ৯৫ ভাগ হলো শক্ত খোলসযুক্ত।
কাঁকড়া চাষি রীধি রানী বলেন, এ কঁকড়ার চাষ করেই ‘খাতি পরতি’ পারছি। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে । ৫ বছর ধরে কাঁকড়ার চাষ এবং ব্যবসা করি। আমি ও আমার স্বামী এক একর জমিতে কাঁকড়া চাষ করছি। তবে সরাসরি আমরা বাজারজাত করতে না পারায় মধ্যসত্ত্বভোগিরা লাভবান হচ্ছে বেশি। এ জন্য সহজে কাঁকড়া নিজেরাই মোকামে বাজারজাত করা দরকার । একাধিক কাঁকড়া চাষিরা বলছেন, সহজ শর্তে ঋণ পেলে আরও কাঁকড়া চাষি বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংগ্রামের ‘ভ্যালু চেইঞ্জ’ ফ্যাসিলেটেটর গিয়াস উদ্দিন বলেন, উপজেলায় দেড় শতাধিক চাষি রয়েছে। সব সময়ই আমরা কারিগরী সহযোগিতা করে আসছি। যখনই চাষিদের কোনো সমস্যা হয় তাৎক্ষণিক গিয়ে পানির লবণাক্ত পরিমাপ করা এবং অক্সিজেন পরিমাপ করে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে পাথরঘাটা উপজেলায় ১ হাজার জনকে কাঁকড়া চাষের আওতায় আনা। এছাড়া চাষিদের স্বল্প সুদেও ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/নাজনীন/আহো/১৫৫০/-আসাচৌ