আজ লোহাগড়া মুক্ত দিবস

2408

নড়াইল, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : লোহাগড়া মুক্ত দিবস আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এ দিনে ৮ নং সেক্টরের অধীনে লোহাগড়ার মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানাকে পাক হানাদার মুক্ত করে উড়িয়েছিলেন বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা।
লোহাগড়া মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আজ রোববার দিনব্যাপি নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্প স্তবক অর্পণ, বর্ণাঢ্য র‌্যালি, শহীদ হাবিবুর রহমান ও মোস্তফা কামালের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও মিলাদ মহফিল।
লোহাগড়া উপজেলার মাকড়াইল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক জেলা কমান্ডার কবির হোসেন জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে লোহাগড়া ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন। মধ্য নভেম্বরে মুক্তিযোদ্ধারা সমগ্র উত্তর অঞ্চল শত্রুমুক্ত করেন। এর পর মুক্তিযোদ্ধারা দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার লক্ষ্মীপাশায় অবস্থিত থানা আক্রমণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৮ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে থানা মুজিব বাহিনীর প্রধান সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শরীফ খসরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফার বিশ্বাস, আবুল হোসেন খোকন, শেখ আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে প্রায় দু’শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে থানা আক্রমণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাক বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় থানায় অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য অস্ত্র গোলা বারুদ ফেলে থানার পূর্ব দিক দিয়ে পালিয়ে যায়। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পাক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ। ৫ ঘন্টা ব্যাপী এ যুদ্ধ চলাকালে থানা অভ্যন্তরে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা উপজেলার কোলা গ্রামের অধিবাসী হাবিবুর রহমান ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গল-বাঁধাল গ্রামের মোস্তফা কামাল।
উল্লেখ্য যে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানা চত্বরে কবর দেয়া হয়। মোস্তফা কামালকে ইতনা স্কুল চত্বরে কবর দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে থানার তৎকালীন ওসি সিরাজুল ইসলামসহ সূধী মহলের সহযোগিতায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের কবরটি টাইলস্ দিয়ে বাঁধানো হয়।
থানা আক্রমণের সময় মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে কুখ্যাত রাজাকার ও পুলিশ সদস্য খালেক ও নড়াইলের আশরাফ রাজাকারসহ ২০ জনকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে গ্রেফতার হয় ১০ জন পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে নিজেদের আয়ত্বে আনেন। সকাল ৯ টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ইউনুস আলী থানায় স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়ে দেন। থানা হানাদার মুক্ত হওয়ার খবরে উলাøসিত মানুষজন স্বতস্ফুর্তভাবে আনন্দ মিছিল করে রাস্তায় নেমে আসে। ৮ ডিসেম্বর সারা দিনই লোহাগড়া থানার বিভিন্ন এলাকায় জনতা বিজয় মিছিল করে।
আমাদা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইউনুস গাজী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানা আক্রমণ করে পাক হানাদার মুক্ত করেন। ৮ ডিসেম্বর সর্বত্র উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। স্বতঃস্ফুর্ত বিজয় উল্লাসে হাজার হাজার মুক্তিপাগল জনতা রাস্তায় নেমে আসে।