বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা

146

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
ব্রেস্ট ক্যান্সার-সমস্যা
বিশ্বে ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন জনস্বাস্থ্য সমস্যা
ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রোগীই মারা যায়। ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারও বর্তমান বিশ্বে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। যতই দিন যাচ্ছে সমস্যা যেন ততই বেড়ে চলেছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি আটজন নারীর একজনের স্তন ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি রয়েছে। সঠিক কোন পরিসংখ্যান না থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র বিভিন্ন তথ্য-উপাত্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৪১ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। যাদের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭জন মারা যায়।
এই সব ক্যান্সার রোগীর ৮ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজার ৭৬৪ জনই স্তন ক্যান্সারের রোগী। শুধু মহিলা রোগীর ক্ষেত্রে হিসেব করা হলে এর পরিমান দাঁড়াবে ১৯ শতাংশ। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।
এই ব্যাপারে ডা: অসীম কুমার দাস জানান, বেশির ভাগ স্তন ক্যান্সারই নারীদের ৫০ বছর বয়সের পরে হয়ে থাকে। পরিবারে মা, খালা, মেয়ে বা বোনের যদি স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে, তবে, আপনারও স্তন ক্যান্সার হওয়া ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া যেসব নারী ৫০ বছর বয়সের পর প্রথম গর্ভ ধারন করে তাদের সাধারণত স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, বেশি বয়সে মাসিক বন্ধ হওয়া বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর হরমোন থেরাপি নেয়া, স্তন ক্যান্সারের একটি সম্ভাব্য কারণ। আবার অধিক ওজন এবং চর্বি জাতীয় খাবার, এলকোহল ইত্যাদি এবং কায়িক পরিশ্রম না করা ন্তন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
নারীর স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের কিছু উপায় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-স্তনে বা বগল তলায় শক্ত চাকা হওয়া যা সাধারণত ব্যথাহীন হয়, ন্তনের আকার অথবা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া, চামড়ার পরিবর্তন যেমন- চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, চামড়ায় গর্ত হওয়া, চামড়া লাল হওয়া বা গরম হওয়া, স্তনের বোটায় কোন পরিবর্তন যেমন-বোটা ভেতর দিকে চলে যাওয়া, বোটা দিয়ে অস্বাভাবিক রক্ত বা পুজ জাতীয় পদার্থ বের হওয়া।
থেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা: সুলতানা বলেন, ‘একবার এ রোগ হলে সারা জীবনই চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে রোগীকে। চিকিৎসা হিসেবে অপারেশন, কেমোথেরাপি, রোডিও থেরাপি উল্লেখযোগ্য।’
অপারেশন: প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সাধারণ শুরুতেই অপারেশন করে পুরো স্তন ফেলে দিতে হয়। তবে, আংশিক স্তন ফেলেও চিকিৎসা সম্ভব, যদি ক্যান্সারের অন্যান্য ব্যবস্থা সহজতর হয়।
তিনি বলেন, স্তনে চাকা যদি বড় হয়ে যায় অথবা বগলের তলায়ও চাকার অস্তিত্ব ধরা পড়ে, তখন শুরুতেই অপারেশন করা হয় না। সে ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির মাধ্যমে চাকাকে ছোট করে সফল অপারেশনের জন্য যোগ্য করে তোলা হয়।
কেমোথেরাপি: রোগের শুরুতেই স্তন ক্যান্সার শুধু স্তনেই সীমাবদ্ধ থাকে না বলে ধারণা করা হয়। সে জন্য প্রায় প্রতিটি স্তন ক্যান্সারের রোগীর কেমোথেরাপি বা ওষুধের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অতিমাত্রায় হরমোন সংবেদনশীল টিউমার, অধিক বয়সে সবক্ষেত্রে কেমোথেরাপির পরিবর্তে হরমোন থেরাপি দেয়া যেতে পারে। যাদের রোগ স্তন বা বগল ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ যেমন- ফুসফুস, লিভার ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের তাদের চিকিৎসা কেবলমাত্র কেমোথেরাপি বা অন্যান্য ওষুধের চিকিৎসা।
রেডিও থেরাপি- উচ্চমাত্রায় এক্স-রে দ্বারা ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করাকে রেডিওথেরাপি বলে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরই রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। যাদের রোগ অন্য কোথাও ছড়ায়নি তাদেরকে আরোগ্য করার জন্য রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। আর যাদের রোগ হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তাদেও রোগ উপশম করার জন্যও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়।
বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের পুরোপুরি চিকিৎসা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে ডা: সুলতানা বলেন, ‘রোগ নির্ণয়, অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি অথবা হরমোন থেরাপি এর সবগুলো চিকিৎসাই বাংলাদেশে সম্ভব। দেশে প্রতি বছর প্রশিক্ষিত সার্জন এবং ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট তৈরি হচ্ছে। তবে, প্রয়োজনের তুলনায় দেশে রেডিওথেরাপি মেশিনের স্বল্পতা রয়েছে। কিন্তু দেশীয় ওষুধ কোম্পানীগুলো এখন দেশেই স্বল্প মূল্যে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করছে।’
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/এসডিজি/আহো/১৮৪৫/-আরজি