রেকর্ড ষষ্ঠবারের মত ব্যালন ডি’অঁর জয় করলেন মেসি, মহিলাদের সেরা র‌্যাপিনো

256

প্যারিস, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ (বাসস/এএফপি) : বয়স কাবু করতে পারেনি অদম্য লিওনেল মেসিকে। ৩২ বছর বয়সে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মত জয় করে নিয়েছেন বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব ‘ব্যালন ডি’অঁর’। মহিলা বিভাগে বর্ষসেরা খেতাব জিতেছেন মার্কিন তারকা মেগান র‌্যাপিনো।
ফ্রান্সের রাজধানীর চ্যাটেলেট থিয়েটারে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অবশ্য উপস্থিত হতে পারেননি র‌্যাপিনো। যেখানে গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা এনে দিয়েছেন।
তবে স্ত্রী আন্তোনেলা রোকজ্জুকে নিয়েই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন মেসি। সঙ্গে ছিলেন তাদের দুই শিশু সন্তান। ২০১৫ সালের পর এটিই ছিল মেসির প্রথম ব্যালন ডি’অঁর খেতাব জয়। এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মত এই খেতাব তুলে নিলেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন সুপার স্টার। এতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ফের ছাড়িয়ে গেলেন তিনি।
গত বারের খেতাব জয়ী লুকা মড্রিচের কাছ থেকে মঞ্চে পুরস্কার হাতে তুলে নিয়ে মেসি বলেন, ‘দশ বছর আগে আমি প্যারিসে আমি প্রথম ব্যালন ডি’অঁর জিতেছিলাম। আমার মনে পড়ে সেবার আমি আমার তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এখানে এসেছিলাম। ওই সময় আমার বয়স ছিল ২২ বছর, তখন খেতাবটি ছিল আমার কল্পনারো অতীত।’
মেসি বলেন, ‘আশা করছি আরো কয়েকটি বছর আমি মাঠের ফুটবলকে উপভোগ করতে পারব। এখন আমার বয়স বেড়েছে। এই মুহুর্তটিকেও উপভোগ্য মনে হচ্ছে, কারণ অবসরের সময় ঘনিয়ে আসার মুহূর্তে এমন একটি অর্জন সত্যি কঠিন।
আর মাত্র কয়েক বছর আমি এই খেলায় আছি, তবে সবকিছু বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি উড়ে চলেছি, সবকিছুই কেমন জানি দ্রুত ঘটে যাচ্ছে।’
দ্বিতীয় ফন ডিক
ফরাসি ফুটবল ম্যাগাজিনের এই উদ্যোগে সারা বিশ্বের একদল সাংবাদিকের সরাসরি ভোটে বর্ষসেরা পুরস্কারসহ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে খেলোয়াড়রা নির্বাচিত হন। এবারের ভোটাভুটিতে তালিকার ১০ম অবস্থানে থাকা লিভারপুলের ডিফেন্ডার ভিরজিল ফন ডিক লাভ করেছেন দ্বিতীয় স্থান। আর তৃতীয় হয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা এনে দেয়া ফন ডিক গত সেপ্টেম্বরে ফিফা বর্ষ সেরার পুরস্কার জয় করলেও এখানে সামান্য ব্যবধানে হেরে গেছেন মেসির কাছে। ফন ডিক বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত এখানে কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা প্রকৃতি প্রদত্ব মেধাবী নন। ষষ্ঠ বার ব্যালন ডি’অঁর খেতাব জয়ীকে তার অসাধারনত্বের জন্য সম্মান দেখাতেই হবে।’
তালিকার শীর্ষ দশে ঠাঁই পাওয়া লিভারপুলের চার ফুটবলারের একজন হচ্ছেন ফন ডিক। এদের মধ্যে সাদিও মানে চতুর্থ, মোহাম্মদ সালাহ পঞ্চম ও গোল রক্ষক অ্যালিসন সপ্তম স্থান লাভ করেছেন। অ্যালিসন অবশ্য বর্ষ সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার লাভ করেছেন।
২০১৯ সালে এ পর্যন্ত ৫৪ ম্যাচে অংশ নিয়ে ৪৬টি গোল করেছেন মেসি। বার্সেলোনার হয়ে গত মৌসুমে লা লীগার ৩৪টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩৬ গোল করে দলকে শিরোপও এনে দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন তারকা।
আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকায় অবশ্য সফল হতে ব্যর্থ হয়েছেন মেসি, তবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গত আসরে ১২ গোল করে শীর্ষ গোলদাতার আসন দখল করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত রোববারও নিজের অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন মেসি। লা লীগায় মেসির গোলেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারাতে সক্ষম হয়েছে বার্সেলোনা।
র‌্যাপিনোর অবিষ্মরণীয় বছর
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ৪৮ জন সাংবাদিকের ভোটে মহিলা ‘ব্যালন ডি’অর’ খেতাবের প্রবর্তন ঘটেছে। যেখানে নরওয়ের আডা হেগারবার্গকে হটিয়ে খেতাব জয় করেছেন র‌্যাপিনো। মহিলা বিশ্বকাপে মাঠে ও মাঠের বাইরে তারকা দ্যোতি ছড়িয়েছেন এই মার্কিন তরুণী। বিশ্বকাপে ছয় গোল করে তিনি গোল্ডেন বুট জয় করার পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বলও। ফাইনালে হল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পাওয়া ম্যাচে প্রথম গোলটিও এসেছে তার কাছ থেকে।
৩৪ বছর বয়সি এই আইকন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচানা করে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন। অবশ্য তার নেতৃত্বেই যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষ দলের সমান বেতন প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে নারী ফুটবল দলও।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ধারণকৃত ভিডিওতে র‌্যাপিনো বলেন, ‘এটি ছিল অবিশ্বাস্য একটি বছর। আমি আমার দলীয় সতীর্থ, কোচ ও মার্কিন সকার ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যারা আকুন্ঠ সমর্থণ দিয়ে আজ আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে।’
অনূর্ধ্ব ২১ বিভাগে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন আয়াক্স থেকে জুভেন্টাসে পাড়ি জামানো ডাচ ডিফেন্ডার মাত্তিস ডিলাইট। কিলিয়ান এমবাপ্পেকে হারিয়ে এই ‘কোপা ট্রফি’ জয় করেছেন ডি লাইট।