বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণসহ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করুন : প্রধানমন্ত্রী

253

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-কপ২৫-গোলটেবিল
সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণসহ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির কাঠামো ও বাস্তবায়নের আলোকে সমতা অথবা স্বচ্ছতার ধারণা একটি মৌলিক ইস্যু, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সহযোগিতায় এই চুক্তির সুফল অর্জিত হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সভ্যতার ক্ষতি করছে এবং পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। এটি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের অস্তিত্বের জন্য এখন হুমকি সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আন্তঃসরকার প্যানেলের ৫ম মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিষয়টি পরিস্কার তুলে ধরা হয়েছে, যে বর্তমান শতাব্দির পুরোটাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব অব্যাহত থাকবে। আমরা কাবর্ন নিঃসরণ বন্ধ করতে না পারলে অথবা কমাতে না পারলে আমাদেরকে ধংসের মিুখামুখি হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইপিসিসি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট রিপোর্ট যদি যথেষ্ট ক্ষতিকর হয়, তবে বৈশ্বিক জলবায়ু ২০১৮এর ওপর সাম্প্রতিক ডব্লিউএমও’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা যা ভাবছি, পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ।
প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি পয়েন্ট অব নো রিটার্ন-এর দিকে দ্রুত ধাবমান হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রীণ হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমিয়ে এনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাস করানো এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ সর্ববৃহৎ ডেল্টা। আমরা যদি এটিকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করি তবে তা হলে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এ দেশের বিপুলসংখ্যক লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই হার ৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠির এক-তৃতীয়াংশ ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি বলেন এতে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি ৬.৭ শতাংশ কমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ২০৮০ সাল নাগাদ প্রায় চার কোটি লোক গৃহহীন হবে এবং গত এপ্রিলে ইউনিসেফ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে স্থানচ্যুত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে এবং বাংলাদেশে এক কোটি ৯০ লাখ শিশু ইতোমধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাব বন্ধ করা না গেলে আমরা কখনোই এসডিজি অর্জন এবং দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারবো না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের স্বল্পতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাঁর স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বদ্বীপ অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডের সহায়তায় ডেল্টা প্লান ২১০০ প্রস্তুত করেছে। তিনি বলেন, দেশীভাবে আমরাই প্রথম এলডিসি দেশ যে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। আমরা এ পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব উৎস থেকে প্রশমন ও অভিযোজন ক্ষেত্রে ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যয় করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমরা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ইস্যু মোকাবেলায় দেশে ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান ও বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড এ্যাকশন প্লান ২০০৯ এর পাশাপাশি রয়েছে ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি অন দ্যা ম্যানেজমেন্ট অব ডিজাস্টার এন্ড ক্লাইমেট ইনডিওস ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার ৬৪ জেলার সবকটিতে সেক্টরভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্যারিস চুক্তি মোতাবেক আমাদের দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে এবং আশা করছে অন্যরাও তাদের নিজস্ব অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সমগ্র বিদ্যুতের শতকরা ৩০ ভাগ অর্জনের একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা গ্রহণ এবং যথাযথভাবে কাজ সম্পাদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নৈমিত্তিক বৃক্ষরোপণের বাইরে আমরা ২০২০ সাল নাগাদ এক কোটি গাছ রোপণ করতে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার উদ্ভাবনী অভিযোজন ও প্রশমন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জলবায়ু স্থিতিশীল দেশে পরিণত হয়েছে এবং সফলভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। অন্যান্য দেশের জন্য যা অনুসরণযোগ্য হতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি ও অনুশীলন ব্যাপকভাবে প্রশংসিত ও অনুসরণযোগ্য হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সংসদে সম্প্রতি বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অন্যান্য পার্লামেন্টে উদ্যোগ গ্রহণের বৈশ্বিক জরুরি আহ্বান জানিয়ে জলবায়ু ঝুঁকির বর্তমান অবস্থা ঘোষণার একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুতির তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ২০১৬ সাল ছিল তিনগুণ এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা বাংলাদেশে অনুরূপ পরিস্তিতি সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতি পরিবেশগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কক্সবাজারে একটি পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বন, পাহাড়, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় জীবন-জীবিকার ক্ষতি করেছে।তিনি বলেন, তাই আমরা ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন কি ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, তার একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। কিন্তু আমি সতর্ক করে দিতে চাই যে, সহিষ্ণুতা ও অভিযোজনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের উচিত হবে শিল্প পূর্ব পর্যায়ের পূর্বের অবস্থায় অর্থাৎ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের কোন ভুল না থাকা সত্ত্বেও আমাদের লোকজন বাস্তুচ্যুত হবে, তাই আমরা আশা করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের আবাসনের দায়িত্ব নিবে এবং তাদের জীবিকার সুযোগ দিবে। তিনি বলেন, অনেকের মধ্যে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আগ্রহের অভাব সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত প্রয়াসের ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবং জাতিসংঘ হচ্ছে সবচেয়ে উপযুক্ত প্লাটফরম।
তিনি বলেন, ১০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক অবদানসহ আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার সকল ‘তহবিল’ নিয়োজিত করতে হবে।
বাসস/এসএইচ/অনু-অমি-জেহক/২০৫৫/-কেএমকে