ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি-আদর্শের সাথে আপস করবেন না : রাষ্ট্রপতি

905

রাজশাহী, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিক্ষকদের প্রতি ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে আপস না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিং-এ ব্যস্ত থাকেন। অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছ পা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর।’
রাষ্ট্রপতি গতকাল সন্ধ্যায় শেখ কামাল স্টেডিয়ামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে-সব খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে।
তিনি একজন শিক্ষককে আদর্শ ও ন্যায়-নীতির প্রতীক হতে হবে উল্লেখ করে তাদের পেশাগত মর্যাদা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিকভাবেও খুবই সচেতন ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনায় একজনের সাথে আরেক জনের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষার্থীর ওপর না পড়ে তাও নিশ্চিত করতে হবে।’
যারা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেন, রাষ্ট্রপতি তাদের সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে অবশ্যই দুরে থাকার পরামর্শ দেন।
নতুন স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে আবদুল হামিদ তাদের বর্তমান অবস্থানে আনতে মা-বাবা, শিক্ষক, সমাজ এবং দেশ ও জনগণের অবদানের কথা মনে রাখার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘মনে রাখবে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তোমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা হয়েছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার। তোমরা তোমাদের মেধা, কর্ম ও সততা দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে পারলে সেই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। এ দেশ ও দেশের সাধারণ জনগণকে ভুলবে না।
রাষ্ট্রপতি ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে উল্লেখ করে জাতীয় তাৎপর্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান সাড়ম্বরে উদযাপনে নবীন গ্র্যাজুয়েটসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের অবদানের কথা স্মরণ করে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে সেই চেতার আলোকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
বক্তৃতার শুরুতে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
এ সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩,৪৩২ জন গ্রাজুয়েট নিবন্ধন করেছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সমাবর্তন বক্তা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্র্রফেসর এম আব্দুস সোবহান, প্রো-উপাচার্য ড. চৌধুরী এম জাকারিয়া, রাবি’র কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর একে এম মোস্তাফিজুর রহমান আল-আরিফ অনুষ্ঠানে অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।