বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩ : ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার নির্যাতিত নারীদের করছে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী

223

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-৩
ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-নারী নির্যাতন
ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার নির্যাতিত নারীদের করছে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী
ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : আনোয়ারা বেগম (ছদ্মনাম)-এর বিয়ে হয়েছে ছয় বছর আগে। তার একটি চার বছরের কন্যাশিশু আছে। আনোয়ারার স্বামী পরকীয়ায় আসক্ত এবং সে আনোয়ারাকে তার বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা এনে দিতে বলে। আনোয়ারা এতে আপত্তি জানালে তার স্বামী তাকে তালাক দেয়ার হুমকি দেয় এবং মারধোর করে। শারিরীক নির্যাতনের শিকার আনোয়ারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে সেবা নেন। আনোয়ারা বলেন, ‘আমি মামলা করিনি। কিন্তুু ওসিসিতে কাউন্সিলিং সেবা নিয়ে নিজেকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করার সাহস ও আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি। এখন আমি আমার সমস্যাগুলো মোকাবেলা করছি। ওসিসি আমাদের অনেক কিছু শেখায়।’
নির্যাতনের শিকার যে কোনো নারী ও শিশুকে স্বাস্থ্যসেবা ও আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য নির্ধারিত কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থিত একটি বিশেষ ব্যবস্থার নাম ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)। এটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের আওতায় সাতটি বিভাগীয় শহরসহ ফরিদপুর ও কক্সবাজারের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। এ সেন্টারগুলোতে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সহায়তা, পুলিশি ও আইনী সহায়তা, ফরেনসিক ডিএনএ পরীক্ষা, মনোসামাজিক কাউন্সিলিং, আশ্রয় এবং সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়। শারিরীক, যৌন এবং দগ্ধ এই তিন ধরণের নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে ওসিসি থেকে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হয়। ওসিসিগুলোতে ডাক্তার, পুলিশের সাব-ইন্সপেকটর, কন্সটেবল, নার্স, সমাজসেবা কর্মকর্তা, কাউন্সিলর এবং আইনজীবী থাকেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন বলেন, ওসিসির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো একজন ভিকটিম এখানে এসে একইসঙ্গে এক জায়গা থেকে সব ধরণের সেবা পেয়ে থাকেন। তাকে আর অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। অপরাধ কী ধরণের, ভিকটিম কী চায়, তার কোন ধরণের সাপোর্ট দরকার সবই সে নিজেই ঠিক করে নিতে পারে। ওসিসি যেখানে নেই সেখানে একজন ভিকটিমকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়ে তার সমস্যাগুলোর সেবা নিতে হয়। এজন্য যেখানে ওসিসি নেই এমনকি বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও ওসিসি চালু করলে ভিকটিমরা অনেক সহজে আরো সুন্দরভাবে সাপোর্ট পাবে।
ওসিসির স্বল্পতার কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এ অবস্থিত ওসিসি’র সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম-এর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘এখানে যে পরিমাণ ভিকটিম আসে আমরা তাদেরকে ঠিকভাবে জায়গা দিতে পারি না। যে পরিমাণ ভিকটিম মামলা করে তার খুবই কম সংখ্যক বিচার পায়। কেননা বিচার প্রক্রিয়া বছরের পর বছর ধরে চলে বলে ভিকটিম এবং অপরাধী দু’পক্ষই দ্রুত নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়। তাই বিচার প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে হলে ওসিসি অনেক সুফল পেত।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৯ সালের এপ্রিলের নিউজলেটারে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়- ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে মোট নয়টি ওসিসিতে নির্যাতিতের সংখ্যা ২০১৮ সালের চতুর্থ তিন মাসের নির্যাতিতের সংখ্যার চেয়ে শতকরা ৯.১৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা ওসিসিতে নির্যাতিতের সংখ্যা শতকরা ১৯.২৩ ভাগ, রাজশাহীতে শতকরা ৪ ভাগ, চট্টগ্রামে শতকরা ১৩ ভাগ, সিলেটে শতকরা ৯.৫৫ ভাগ, ফরিদপুরে ৩৩ ভাগ, রংপুরে ৩৮.৪৬ ভাগ, কক্সবাজারে ৪.২৫ ভাগ, খুলনায় ৪ ভাগ এবং বরিশালে ৮.৯ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐ নিজউলেটার থেকে আরও জানা যায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর আওতায় ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে মোট ৩১৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে তেত্রিশটি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে যার মধ্যে তিনটি মামলায় অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।
ওসিসিতে আগত নির্যাতিতরা ওসিসির ওয়ার্ডে খুব কম সময়ের জন্য ভর্তি থাকেন। তবে, নির্যাতিতরা যে কোনো সেবা ভর্তি না থেকে সরাসরি বা টেলিফোনেও পেতে পারেন। ওসিসির সেবা সপ্তাহের সাত দিনের চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে। গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, যশোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ওসিসি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/শামো/১৯৫৫/আহো/-আরজি