বাসস দেশ-৩৯ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : মিয়ানমারকে অন্যায় প্রচারণা বন্ধ করতে হবে : বাংলাদেশ

246

বাসস দেশ-৩৯ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
বাংলাদেশ-মিয়ানমার
মিয়ানমারকে অন্যায় প্রচারণা বন্ধ করতে হবে : বাংলাদেশ

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসনে ঢাকা ধারাবাহিকভাবে সু-প্রতিবেশীসুলভ নীতি অনুসরণ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একপক্ষের অযৌক্তিক অভিযোগ, যারা সঙ্কটের জন্য দায়ী, তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
অতীতের হতাশাব্যাঞ্জক অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আবারো প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে প্রত্যাবাসন বিষয়ে দু’টো ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে অগ্রসর হয়। সে অনুযায়ী রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি এবং সংকটের মূল কারণ নিরসণের মাধ্যমে তাদের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা বিধান, নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও মৌলিক সেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান এবং তাদের নিজস্ব আবাসস্থানে অথবা তার কাছাকাছি জায়গায় ফিরে যাবার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব মিয়ানমারের।
তাছাড়া উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় যথাযথ পন্থায় ফিরে নিতে উৎসাহিত করার জন্য মিয়ানমার সম্পূর্ণভাবে দায়বদ্ধ।
এতে আরো বরা হয়, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে, মিয়ানমার তার দায়িত্ব পালনে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা দেখাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে এবং বাংলাদেশের উপর দায় চাপাতে চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, খুব পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন ও ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিকভাবে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী রোহিঙ্গা সংকটের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
বর্তমান (মিয়ানমার) সরকার কর্তৃক একই ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়াই সঙ্কটের একমাত্র কারণ, এতে আরও বলা হয়েছে এই সঙ্কটের উদ্ভব মিয়ানমারে হয়েছিল এবং সমাধানটি পুরোপুরি সেখানেই রয়েছে।
ঢাকা বলেছে, মিয়ানমার মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোককে ফিরে আসার দাবি করছে। তারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করে এমন যাচাই ছাড়া করে মিয়ানমারে ফিরে গেছে যা রাখাইনের বাস্তব চিত্র উন্নতির সাক্ষ্য দেয় না। বরং রেডিও ফ্রি এশিয়া সম্প্রতি এই প্রত্যাবাসীদের নিয়ে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রস্তুতির অভাব রয়েছে বলে এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
যদিও মিয়ানমারের দাবি, রাখাইনের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল, তবে এর জন্য জাতিসংঘের কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং প্রত্যাবাসনের প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবর্তনের জায়গাগুলো পরিদর্শনের সুযোগ দিতে হবে বলে বিবৃতিতে পরামর্শ দেয়া হয়।
মিয়ানমার সর্বদা অভিযোগ করে যে রোহিঙ্গারা এআরএসএ এবং এনজিও কর্মীদের দ্বারা ভয়ভীতি দেখানো ও নেতিবাচক প্রচারের কারণে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করার সাহস পায় না।
এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকারীরা যে কোনও প্রান্ত থেকে কোনও প্রভাব বা হুমকি ছাড়াই প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে যাতে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এআরএসএ কার্যক্রম না থাকলেও মিয়ানমার তার দায়বদ্ধতা এড়াতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার জন্য এ জাতীয় প্রচার চালাচ্ছে।
এতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিমালার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং কার্যকর প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের কোথাও সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে।
মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ যে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়র জন্য বৈষম্যমূলক কোনও নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে দ্বিপাক্ষিক পন্থায় সম্মত হয়েছে, উল্লেখ করে ঢাকা জনায়, জাতিগত ধর্মীয় পরিচয় এবং বৈষম্য না করেই প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি সকলের জন্য প্রযোজ্য।
কক্সবাজারে আশ্রয়প্রাপ্ত প্রায় ৪৫০ হিন্দুর মধ্যে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত মাত্র ৬৫টি যাচাই করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশকে হিন্দু না পাঠানোর অভিযোগ করার আগে মিয়ানমারের উচিৎ ছিল এই সমস্ত লোকের অতীতের আবাসের যাচাই বাছাই করা।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার স্বেচ্ছাসেবকদের ফিরে আসতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন।
মিয়ানমারের তার প্রমাণ সংগ্রহ ও যাচাইকরণ দলসহ (ইসিভিটি) ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অফ ইনকয়েরি’ (আইসিইই) এ প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ, যদিও পূর্ববর্তী তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনগুলো অত্যন্ত বিতর্কিত ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমার যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি অবসান করতে সত্যই আন্তরিক হয়, তবে চলমান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে জবাবদিহিতার উদ্যোগের প্রতি তাদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা বাড়ানো উচিত।
বাসস/টিএ/অনু-এসই/২১৩০/কেএমকে