যথাসময়ে শনাক্তের পর চিকিৎসায় ৯০ শতাংশ ব্রেস্ট ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব

798

ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : সাঁইত্রিশ বছর বয়সী মাহফুজা খাতুন দু’সন্তানের জননী। বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আর ছোট মেয়ে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। স্বামী ব্যাংকার। মাহফুজা নিজে এখন পুরোপুরিই গৃহিণী। আগে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সিনিয়র একাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। ছোট মেয়ে হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে এখন সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
খুব সুন্দর করেই চলছিল মাহফুজা আর রাইসুলের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। বিষয়টি জানার পর রাইসুল আর মাহফুজার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
গত কয়েক মাস ধরেই মাহফুজার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। স্তনে চিন চিন ব্যাথা করত। আবার গত কয়েক দিন ধরে বাম পাশের স্তনে একটা চাকার মত অনুভব করছিলেন। বিষয়টি স্বামী রাউসুলকে জানালে পর দিনই একজন গাইনোলজিস্টের কাছে যান এই দম্পতি। প্রাথমিক পরীক্ষার পরই ডাক্তার বুঝতে পারেন যে মাহফুজা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিন্তু কোন স্টেজে আছে তা জানার জন্য তিনি বেশ কিছু পরীক্ষা দেন।
পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা গেল, মাহফুজার বাম পাশের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রায় লাস্ট স্টেজে। এখনই অপারেশন করা না হলে ডান পাশের স্তনও আক্রান্ত হবে, সময় বেশী নাই। সম্ভব হলে পর দিনই অপারেশন করতে হবে।
রুমি বিশ্বাসের ঘটনাও অনেকটা মাহফুজার মত। রুমি কাজ করেন একটি প্রাইভেট ব্যাংকে। বয়স ৪১। তিনিও দুই সন্তানের জননী। যখন তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে তখন ডাক্তারের আর কিছুই করার ছিল না। শেষ পর্যন্ত অপারেশন করে বাম পাশের স্তন কেটে ফেলতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ, স্থুলতা, মদ্যপান, ঋতু ¯্রাব, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ও পারিবারিক কারণেও স্তন ক্যান্সার হয়। এটাকে কমিয়ে আনতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ, ৩০ বছর বয়সের আগে দু’টি সন্তান গ্রহণ ও নিয়মিত স্তন স্ক্রিনিং অনেকাংশে ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্স সেন্টার (আইএআরসি) এর এক প্রতিবেদন মতে বাংলাদেশে প্রায় ১২,৭৬৪ জন নারী প্রতি বছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৬,৫০০ ও বেশি নারী মৃত্যু বরণ করেন এই ক্যান্সারে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাফর মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, স্তন ক্যানসার কমিয়ে আনতে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ ক্যান্সারের লক্ষণ সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। সচেতনতার মাধ্যমেই স্তন ক্যানসারে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের মতে যদি সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করা যায় তবে চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগীর রোগ নিরাময় সম্ভব হয়। তিনি বলেন অস্বাভাবিক কোষ বাড়লে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। আক্রান্তের দিক দিয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের অবস্থান দ্বিতীয়।
গাইনোলজিষ্ট ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, মূলত কুসংস্কার এবং সাধারণ বিশ্বাসেই মূল বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের গ্রামাঞ্চলের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্তার প্রতিরোধে। এমনকি নারীরা যখন তাদের স্তন নিয়ে সমস্যায় পড়েন তখনও তাঁরা কারো কাছে মুখ ফুটে কিছু বলেন না। স্বামীকেও তাঁরা এ বিষয়ে বলতে লজ্জা পান।
তাঁর মতে চল্লিশোর্ধ সকল নারীদের অবশ্যই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সচেতনতাই পারে নারীদের এই মরণ ব্যাধি থেকে বাঁচাতে।