নিজেদের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টে কোলকাতায় মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত

175

কলকাতা, ২১ নভেম্বর (বাসস) : আগামীকাল কলকাতায় নিজেদের প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টে গোলাপি বলে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। কেন গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট, কেমন হবে এই ম্যাচটি? ভারতীয় মাটিতে গোলাপি বলের সিম মুভমেন্ট কেমন হবে? ব্যাটসম্যান না বোলার সুবিধাটা কে পাবেন? শেষ মুহূর্তে ক্রিকেট মহলে এই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে। গোলাপি বল অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম চালু হয় এবং সেই টেস্ট ম্যাচেই গোলাপি বল ব্যবহার করা হয়। ভারতের কলকাতাতেও আগামীকাল গোলাপি বলে খেলা হবে দিবা-রাত্রির টেস্ট। কেন দিন-রাতের টেস্ট গোলাপি বলের ব্যবহার, প্রশ্নের উত্তরে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের আভিমত, ফ্লাড লাইটে লাল বল দৃশ্যমান হয় না। সাদা বলের তো প্রশ্নই নেই। সেক্ষেত্র দুই রং-কে মিশিয়ে তৈরি হওয়া গোলাপিকেই দিন-রাতের টেস্টের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। কারণ ফ্লাড লাইটের আলোতে গোলাপীবলই দৃশ্যমান হয় বেশী যা ভারতে পরীক্ষিত। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কথায়, কৃত্রিম আলোয় উজ্জ্ল রাখার জন্য গোলাপি বলকে অতিরিক্ত পালিশ করা হয়। মোট তিন থেকে চার বার এই বলে রং দেওয়ার প্রক্রিয়া চলে। সে কারণে লাল বল যত তাড়াতাড়ি বিবর্ণ হয়, এত তাড়াাতাড়ি গোলাপি বল খারাপ বা পুরনো হয় না । আর সে কারণে গোলাপি বলে সুইং বেশি হয় বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। লাল বল ‘র’ লেদার দিয়ে তৈরি হয়। তাই তাতে রং ধরে খুব ভালো। শুকোয় ও তাড়াতাড়ি। তাই লাল বল তৈরি করতেও বেশি সময় লাগে না। কিন্তু গোলাপি বলে কয়েক খেপে রং লাগিয়ে পালিশ করতে হয় বলে এই বল তৈরি করতে সাত থেকে আট দিন সময় লেগে যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রিভার্স সুইং! ফ্লাাড লাইটে দৃশ্যমান ও চকচকে রাখার জন্য গোলাপি বলে লাল বলের থেকে অতিরিক্ত পালিশ করা হয়। তাই এই বল সহজে পুরনো হয় না বা রং হারায় না। তাই এই বলে রিভার্স-র পরিবর্তে সুইং বেশি হওয়ার কথা। অনেক ক্ষেত্রে স্পিনাররা গোলাপি বলে লাভবান হতে পারেন বলেও বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
গোলাপী বল সম্পর্কে মুশফিক
ঐতিহাসিক গোলাপি বলে নৈশালোকে খেলাটাই বাড়তি আবেগ আমাদের জন্য। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মনে করছেন, ‘গোলাপি বলে টেস্ট খেলাটা আমাদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ ‘ইডেনে ঐতিহাসিক টেস্টে মাঠে নামার জন্য উদগ্রীব হলেও চিন্তার ভাজ তো রয়েছে-ই তবে লাল, সাদা বলের তুলনায় গোলাপি বল অনেক বেশি সুইং করে। দুদিন অনুশীলনের মাধ্যমে সুইংয়ের সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছি।’
গোলাপি বল সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা নেই বাংলাদেশ শিবিরে। ইন্দোরে মাত্র দুদিন অনুশীলন করার সুযোগ মিলেছে। ইডেনে গতকাল ও আজ, আরও দুদিন। অর্থাৎ চারটি সেশন অনুশীলন করে গোলাপি বলের লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত তারা।
বাংলাদেশ দলের ফার্স্ট বোলার আল আমিন বলেন, ‘ইডেনে গোলাপি বলে ঐতিহাসিক টেস্ট খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। গোলাপি বল সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি ধারণা নেই। আশা করছি মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না। তবে এই ম্যাচটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে।’
আল আমিন মনে করছেন তাঁদের মতো ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও গোলাপি বলে সমস্যায় পড়তে হবে। তাঁর কথায়, ‘গোলাপি বল সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি ধারণা নেই। বেশ কয়েকজন ভারতীয় ক্রিকেটারেরও একই অবস্থা। লাল বলের সঙ্গে গোলাপি বলে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে দুই দলের খেলোয়াড়দেরই গোলাপী বলে খেলতে হবে। বোলার হিসেবে একটা কথা বলতে পারি, গোলাপি বলে বোলাররা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে। আমাদের সামনে যে সুযোগ আসবে সেটা কাজে লাগাতে হবে। না হলে ভারতীয় দলের ওপর চাপ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে। ’
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে গোলাপি বলের সুইং-র বিষয়টি নিয়ে। দলের অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজও গোলাপি বলে সুইংয়ের কথা ভাবছেন কারণ হিসেবে তিনি বলেন,’গোলাপি বল সুইং ও বাউন্স অনেক বেশি। গতিও বেশি। ব্যাটসম্যানদের সতর্ক থাকতে হবে’।’
এদিকে আগামীকালকের গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়ে কলকাতা জুড়ে এখন উন্মাদনা। শহর সাজছে গোলাপি রংয়ে। গোলাপি বেলুন, গোলাপি মাসকট, সব কিছুতেই গোলাপি টেস্টের ছোঁয়া। ময়দানের কোনও কোনও তাঁবুও সেজেছে গোলাপি রংয়ে।
গোলাপী বলের সুবিধা-অসুবিধা দুই-ই থাকবে : হরভজন
ইডেনের ফ্লাডলাইটে ফিঙ্গার স্পিনারদের চেয়ে রিস্ট স্পিনাররা বেশি কার্যকরী হবে বলে মনে করছেন হরভজন সিং। ভারতের এ প্রাক্তন তারকা বোলার জানিয়েছেন, গোলাপি বলের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণেই এই বাড়তি সুবিধা পাবেন রিস্ট স্পিনাররা।
ভারতের মাটিতে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইডেন গার্ডেন্সে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আসন্ন সেই টেস্ট ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে। গোলাপি বলের টেস্ট নিয়মিত মতামত ব্যক্ত করে চলেছেন প্রাক্তন তারকারা। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে মুখ খুললেন হরভজনও। ভাজ্জি জানিয়েছেন, ‘আসন্ন দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে আরও অনেকের মতো আমিও দারুণ কৌতূহল অনুভব করছি। নিজে একজন স্পিনার হওয়ার সুবাদে আমার মনে হয়েছে ইডেনের ফ্লাডলাইটে গোলাপি বলে ফিঙ্গার স্পিনারদের তুলনায় রিস্ট স্পিনাররা বেশি কার্যকরী হবে। কারণ গোলাপি বলে বাড়তি সুবিধা পাবে তারা। রিস্ট স্পিনারদের হাত থেকে বল বেরনোর আগে সিম বুঝতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে ব্যাটসম্যানরা। গোলাপি বলের উপর কালো সেলাই থাকার কারণেই আমার এটা মনে হয়েছে।
এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে কুলদীপ যাদব থাকলেও, তিনি প্রথম একাদশে জায়গা পাচ্ছেন না। তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণীর পর কি কুলদীপ প্রথম একাদশে আসবেন? জবাবে হরভজন বলেন, ‘দল নির্বাচন নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। কে দলে থাকবে, কে থাকবে না তা টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। তবে বাংলাদেশকে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে। আর তা হল স্পিনারদের মোকাবিলার আগে তাদের সামলাতে হবে ভারতের বিধ্বংসী পেস আক্রমণ। তারপর অন্য কথা।’ হরভজনের কাছে ইডেন ছিল স্বপ্নের মাঠ। নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভাজ্জি বলেন, ‘ইডেনে বোলারদের সব থেকে বেশি দাপট দেখা যায় বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে। যখন দিনের আলো কমে গিয়ে ধীরে ধীরে ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠে।’