বাজিস-৮ : মাগুরায় ৩৭২টি দরিদ্র পরিবার দুর্যোগসহনীয় ঘর পেয়ে খুশি

115

বাজিস-৮
মাগুরা- দুর্যোগ সহনীয় ঘর
মাগুরায় ৩৭২টি দরিদ্র পরিবার দুর্যোগসহনীয় ঘর পেয়ে খুশি
॥ দেলোয়ার হোসেন ॥
মাগুরা, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় দুর্যোগসহণীয় ঘর পেয়ে খুশি ৩৭২টি দরিদ্র পরিবার। এসব ঘরে দরিদ্র পরিবারগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।
জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির বিশেষ বরদ্দ দিয়ে গ্রামীণ দরিদ্র গৃহহীন এসব জনগোষ্ঠীর জন্য দুর্যোগ সহণীয় এ ঘর নির্মিত হয়েছে।
দুর্যোগসহনীয় ঘর পাওয়া সদর উপজেলার বেলনগর গ্রামের দরিদ্র বর্গা কৃষক মনিরুল মোল্যা (৪৫) জানান, সরকারিভাবে দুই রুমবিশিষ্ট পাকা টিনসেড ঘর, রান্নাঘর ও ল্যাট্রিনসহ আমাদের যে ঘর করে দেয়া হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান। সরকারিভাবে ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ঘরে ওঠার আগে মিলাদ মাহফিল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ জীবন কামনায় দোয়া করেছি।
তিনি আরো জানান, দারিদ্রতার কারণে ছোট একটি টিনের ভাঙা ঘরে স্ত্রী পারভীন বেগমসহ চার কন্যা সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাছিল তাদের। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলে ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়তো। তখন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভাঙা ঘরের এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতেন। দারিদ্রতার কারণে ঘর মেরামতের সামর্থ ছিল না। সরকারিভাবে ঘর করে দেয়ায় এখন পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারছি।
ঘর পাওয়া অপর উপকারভোগী সদর উপজেলার রামনগর ঠাকুরবাড়ি গ্রামের সুন্দরী বেগম (৪৫) জানান, প্রায় ১৭ বছর হলো তার স্বামী ওহিদ শেখ তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও দিনমজুরী করে ছোট ভাই আজাদের ভাঙা ঘরে ছেলে মামুনকে নিয়ে কোনমতে দিন কাটছিল তাদের। ভাইয়ের দেয়া ২ শতক জমিতে সরকারি ভাবে দুর্যোগসহণীয় ঘর করে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমার ভাগ্যে এমন একটি পাকা বাড়ি জুটবে তা কখনও ভাবিনি। এ ঘর পেয়ে আমি অত্যন্ত খুশি। সুন্দরী বেগম আরো জানান, তার ছেলে মাগুরা শহরের ইছাখাদা তালতলা এলাকার একটি প্লাটিক কারখানায় কাজ করে। সরকারিভাবে পাওয়া বাড়িতে বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে অনেক ভালো আছেন তিনি।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গৃহহীণদের জন্য মাগুরা জেলার চার উপজেলায় মোট ৩৭২টি দুর্যোগ সহণীয় বাসগৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ(টিআর/কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলায় মোট ৯ কোটি ৬১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩২ টাকা ব্যয়ে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ কোটি ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২১ টাকা ব্যয়ে ৮৮টি, শ্রীপুর উপজেলায় ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯০ টাকা ব্যয়ে ৯১টি, মহম্মদপুর উপজেলায় ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৩ টাকা ব্যয়ে ১০৩টি এবং শালিখা উপজেলায় ২ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৭২৮ টাকা ব্যয়ে ৯০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় উপকারভোগী অধিকাংশ পরিবারগুলোই সেখানে বসবাস করেছেন। এ ছাড়া ৩৭২টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর নতুনভাবে আরো ১৮৯টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। খুব দ্রুতই এসব ঘরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল জানিয়েছেন।
তাদের দেয়া তথ্য মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য বাসস্থান নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন, এ লক্ষ্যে ‘গৃহহীণদের গৃহদান’কর্মসূচির অগ্রাধিকার প্রদান, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ গ্রামীণ এলাকায় যে সকল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামন্য জমি বা ভিটা আছে, কিন্তু টেকসই ঘর নেই তাদের জন্য ৮০০ বর্গফুট জায়গায় (প্রায় দুই শতাংশ জমি) রান্না ঘর, টয়লেটসহ একটি সেমিপাকা টিনসেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ সকল ঘরের সাথে ভবিষ্যতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সোলার প্যানেল সংযোজন ও গৃহ সংলগ্ন টয়লেট থাকার ফলে রাত্রিকালে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের মাত্রা প্রতি বছর আরো তীব্রতর হচ্ছে। এ সকল দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি দুর্যোগসহণশীল জাতি গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্যোগঝুঁকি হ্রাসে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। প্রতি বছরই কোন না কোন দুর্যোগে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী গৃহহীণ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। এ ক্ষেত্রে ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া অনেক দ্ররিদ্র পারিবারের বাস উপযোগী ঘর নির্মাণের সামর্থ থাকে না। ফলে যাদের সামান্য জমি বা ভিটা আছে কিন্তু টেকসই ঘর নেই, তাদেরকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় টিআর/কাবিটা-কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দিয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীণ পরিবারের জন্য দুর্যোগ সহণীয় এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম জানান, গ্রামীণ দরিদ্র জণগোষ্ঠীর জন্য দুর্যোগ সহণীয় ঘর নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারি পদক্ষেপ। এটি সরকারের নেয়া বিভিন্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো মধ্যে অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প। এটি বস্তবায়নের ফলে দরিদ্র জনসাধারণ সরকারের প্রতি অত্যন্ত খুশি। এ কর্মসূচি বাস্তাবায়নে দরিদ্র জণগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নসহ এসডিজি বাস্তাবায়নে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাসস/সংবাদদাতা/১৪৩৫/নূসী