বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : আগামী দু’দিনের মধ্যে পেঁয়াজ ভর্তি বিমান পৌঁছবে, প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

122

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-স্বেচ্ছাসেবক লীগ-সম্মেলন
আগামী দু’দিনের মধ্যে পেঁয়াজ ভর্তি বিমান পৌঁছবে, প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

সরকারের ধারবাহিকতা এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকায় তাঁর সরকার বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের সুফল তৃণমূল পর্যায়ের প্রত্যেক ঘরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশ বিরোধী স্বার্থান্বেষী মহলের বিভিন্ন অপপ্রচার সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হলে এই দারিদ্র্য বিক্রি করে যারা চলতো তাদের আঁতে ঘা লাগে । কাজেই তারা বারবারই এতে একটা বাগড়া দেয়ার এবং অপপ্রচার চালাবার চেষ্টা করে। কেউ যেন এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হন।’ তিনি বলেন, ‘সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে সেবাটা দিচ্ছে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে। সেইসঙ্গে উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি এ সময় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ,মাদক এবং দুর্নীতি বিরোধী সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা এই দেশ থেকে মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি দূর করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘এর বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তা আমরা অব্যাহত রাখবো। কারণ বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আর একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতিটা সম্ভব।’
দুর্নীতি করে টাকা কেন বানাতে হবে, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন,‘সন্ত্রাসি কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি, দুর্নীতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে সেটা দিয়ে আবার বিলাস-ব্যসনে জীবন যাপন করা, আর ওটা দিয়ে ফুটানি-ফাটানি করা- এটা কখনো এদেশের মানুষ বরদাশত করবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরানী খাওয়ার থেকে সৎপথে নূন ভাত খাওয়া অনেক সম্মানের, অনেক মর্যাদার এবং অনেক ভালো। এটাই হলো বাস্তবতা।’
তিনি এ সময় উদাহারন দেন- বিএনপি দুর্নীতি করে এতটাকা কামিয়েছিল যে, জয়কে (তাঁর পুত্র এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়) আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে এফবিআই’র একজন এজেন্টকে পর্যন্ত তারা কিনে ফেলে এবং তারা তাঁর (শেখ হাসিনার) পরিবারের অর্থ-সম্পদ বিষয়ে খোঁজ-খবর করাও শুরু করে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে বের হয়ে আসলো খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্রের দুর্নীতির তথ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এফবিআই’র তদন্তেই বের হলো- একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর ছেলে এবং বোন (শেখ রেহানা)- তাঁদের বিষয়ে কোথাও কোনরকম কমিশন খাওয়া, চাঁদা খাওয়া বা দুর্নীতির কোন দৃষ্টান্ত তারা পায় নাই।’ এমনকি এ সম্পর্কিত আমেরিকার সংশ্লিষ্ট আদালতের মামলায় এই ঘটনায় সম্পৃক্ত অভিযোগে বিএনপি’র দুই নেতার নাম পর্যন্ত চলে এসেছিল, বলেন তিনি।
বিএনপিকে খুনী, দুর্নীতিবাজ, মানি লন্ডারিংকারীদের দল আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এরা আর কোনদিন যেন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করতে হবে।’ তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, ‘এরা আসলো (ক্ষমতায়) মানেই বাংলাদেশের দুর্ভোগ। এরা ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশকে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া। আবার জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস শুরু হওয়া। তারা আবার বাংলা ভাই সৃষ্টি করবে, কারণ তারা নিজেরাই সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদে লিপ্ত।’
তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তাঁর সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নাম উল্লেখ করে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের অনেক দায়িত্ব এ দেশের প্রতি। এ দেশের জনগনের প্রতি। কারণ জাতির পিতা এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। কাজেই দেশের মানুষের সেবা কতটুকু করা যায়, সেভাবেই আমাদেরও চিন্তা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন রাজনীতিকের জীবনে কি পেলাম, কি পেলাম না সেটা বড় কথা নয়। কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, সেটাই বড় কথা।’ তিনি বলেন, ‘কতটুকু মানুষকে দিতে পারলাম সে চিন্তা ও আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করলে এই রাজনীতির কখনো মুত্যু হয় না, ধ্বংস হয় না।’ ‘আইয়ুব খান, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া বারবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সফলতা পায়নি। কারণ এই সংগঠনের শিকড় এই বাংলাদেশের মাটিতে গেঁড়ে আছে।’ ‘কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না’- এই নীতি নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের শাসনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গ্রামের প্রত্যেকের বাড়িকে এক একটি কৃষি খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচেছ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের প্রি-প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক বিতরণ এবং প্রাইমারী থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি উপবৃত্তি প্রদানের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষরতার হার এখন ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
সারাদেশে ইউনিযন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান এবং টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে মাতৃ ও শিশু মুত্যু হার রোধ, পরিষ্কার-পরিচ্ছনা এবং পুষ্টিকর খাবারের প্রতি জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারের সাফল্য ও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটি অঞ্চলে নারী-পুরুষ সমানভাবে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে কারণ আওয়ামী লীগ যে নীতিমালা নিয়েছে, ৭ গুণ বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে যে অর্থনীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে তাতে সমগ্র দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে একদিন এদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেই স্বাধীনতার সুফলকে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যেক ঘরে পৌঁছে দেয়াই তাঁর এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসাজ-এফএন/১৮২০/কেএমকে