মাগুরায় গমের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বারি গম-৩০ নামের নতুন জাত

444

মাগুরা ২৫ মার্চ ২০১৮ (বাসস) : জেলায় প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি গম-৩০ নামের একটি নতুন জাত। চাষ হওয়া এ জাতের গমে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। তাপ সহিষ্ণু ও রোগ প্রতিরোধী নতুন এ জাতের গমের বীজ কৃষকদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে আগামীতে গম উৎপাদনে বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গম মূলত শীতকালীন সফল। শীত যত বেশি হয় গমও ততো ভালো হয়। কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত আবহওয়ায় গম মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গমের ফলন কমে যায়। এ ক্ষেত্রে বারি গম-৩০ নতুন এ জাতটি তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় গমের ফলন ঠিক থাকে।
যশোর গম গবেষণা কেন্দ্রে (আরএআরএস) ও যশোর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা সদর, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলায় মোট ২ একর জমিতে এ জাতের গমের প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে চাষ করেছে। এর বীজ সংরক্ষণ করে আগামীতে কৃষকদের মাঝে এ জাতের গম চাষে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বারি গম-৩০ জাতটি রোগ সহনশীল। এ ছাড়া পাতা ঝলসানো ও গমের পাতায় মরিচা রোগ প্রতিরোধী। এছাড়া অন্যান্য জাতের তুলনায় হেক্টর প্রতি উৎপাদনও কিছুটা বেশি হয়। অন্যান্য জাতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৪ থেকে ৫টন। সেখানে বারি গম-৩০ জাতে হেক্টর উৎপাদন হবে সাড়ে ৪ টন থেকে সাড়ে ৫ টন। এ ছাড়া এটির জীবনকাল অন্যান্য জাতের তুলনায় কিছুটা কম। অন্যান্য জাতের জীবনকাল যেখানে ১১০ থেকে ১১৫ দিন সেখানে বারি গম-৩০ জাতের গম ঘরে তুলতে কৃষকের সময় লাগবে ১০০ থেকে ১০৫ দিন। তাছাড়া এটি আমন ধান কাটার পর দেরিতে চাষ করার উপযোগী। ফলে কৃষকরা এ জাতের গম চাষ করে ভালো ফলন পাবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে আঠারখাদা গ্রামে কৃষক আকবর আলী, আব্দুল হাকিম বিশ্বাস, নাজমুল বিশ্বাসের ২০ শতক করে মোট ৬০ শতাংশ জমিতে বারি গম-৩০ প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এ জাতের গম চাষে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের প্রদর্শনী প্লট থেকে প্রায় ৮মণ করে গম উৎপাদিত হয়েছে। এ গমের বীজ সংরক্ষণ করে আগামীতে অধিক জমিতে চাষ করবেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন ।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, তাপ সহিষ্ণু বারি গম-৩০ জাতটির মাগুরাতে প্রথমবারের মত চাষ হয়েছে। জাতটি রোগ সহনশীল এ জাতটি পাতা ঝলসানো ও গমের পাতায় মরিচা রোগ প্রতিরোধী। এছাড়া অন্যান্য জাতের তুলনায় হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি হওয়ায় আগামীতে এ জাতের গম চাষে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা হবে। যা আগামীতে মাগুরা জেলায় গমের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, জেলায় চলতি মৌসুমে মোট ৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। এর সদর উপজেলায় ৫৩৫ হেক্টর, শ্রীপুরে ১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর, শালিখায় ১৪০ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। চাষকৃত জমি থেকে ১৪ হাজার ৯৪১ মেট্রিকটন গম উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।