বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (লিড) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : ক্ষুদ্র ঋণের কাঙ্ক্ষিত সুফল মানুষ পায়নি : প্রধানমন্ত্রী

122

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (লিড) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-উন্নয়ন মেলা
ক্ষুদ্র ঋণের কাঙ্ক্ষিত সুফল মানুষ পায়নি : প্রধানমন্ত্রী

‘২১ বছর পর দেশ পরিচালনায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার দারিদ্রকে দেশের প্রধান শক্র হিসেবে চিহ্নিত করে’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘দারিদ্রের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়তে হবে এবং মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের স্বল্প মেয়াদি, দীর্ঘ মেয়াদি এবং আশু পরিকল্পনা প্রণয়ন করি।’
মূলত, বিরোধী দলে থাকার সময়েই সরকারে গেলে দারিদ্র বিমোচনের কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ এবং তারই ধারবাহিকতায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ’৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এমডিজি’র সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করে এবং ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা চলছে এবং এগিয়ে চলছে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ।
এর সাথে সাথে ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চলছে এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কিভাবে গড়ে উঠবে সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনার খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। কাজেই সব সময় জনকল্যাণে কাজ করে যাওয়াই দলটির কাজ। যার প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্যই হচ্ছে, টেকসই উন্নয়ন এবং এসডিজি’র বাস্তবায়ন।
স্বৈরশাসকদের প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এটিকেও তাদের শাসনামলে বাংলাদেশের উন্নয়ন না হওয়ার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘যখন মিলিটারি ডিক্টেটররা ক্ষমতায় থাকে তখন সরকার থাকে দুর্বল। কেননা তাদের কোন ভিত্তি থাকে না। অর্থাৎ জনগণের কোন শক্তি থাকে না।’
সে সরকার ব্যবস্থা অপরের কাছে হাত পেতে চলে, নিজেদের সম্পদশালী করে গড়ে তোলে, ফলে দেশের মানুষ দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণায় দিনের পর দিন ভুগতেই থাকে। জনগণের দিকে তাকানোর কেউ থাকে না, বলেন তিনি।
জাতির পিতার এই পদাংক অনুসরণ করে গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের চালু করা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির বিভিন্ন কর্মসূচি, যেমন- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা চালু, গরিবদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে এবং স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে এবং স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের মত কর্মসূচির উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার নির্দেশ ছিল কৃষি ব্যাংক গ্রামে কৃষকদের কাছে চলে যাবে। হাটবারে গ্রামের হাটে বসে ঋণ প্রদান করবে এবং সেখান থেকেই আবার ঋণ সংগ্রহ করবে। এভাবেই আমরা কৃষকদেরকে সহযোগিতা করেছি।’
কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, কৃষি উপকরণ কার্ড প্রদান, বিএডিসিকে আরো উন্নত করে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বিতরণের উল্লেখ করেন তিনি।
‘ঘরে ফেরা’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’, ‘আশ্রায়ণ’সহ বিভিন্ন দারিদ্রবান্ধব কর্মসূচির উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার জন্য সরকার এ ধরনের বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমিহীনদের জমি দিয়েছি। যারা গৃহহারা তাদের ঘর করে দিয়েছি এবং দিচ্ছি। মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি।’
তিনি যোগ করেন, ‘জাতির পিতা একটি কথা বলতেন- ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক জাতি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাই না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’
সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির ফলে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে উল্লেখ করে এই হারকে ১৫/১৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় তার সরকার, বলেন সরকার প্রধান।
তাঁর সরকারের সময়ে দেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বহিঃবিশ্বে তাঁকে অনেক অনুসন্ধিৎসু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে গেলে আমাকে প্রশ্ন করা হয়- বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ম্যাজিকটা কি?’
‘আমি তাদের বলি, আসলে কোনো ম্যাজিক নেই। দেশকে ভালোবাসা, দেশকে জানা এবং দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করা- এটাই হলো মূল ম্যাজিক, ’যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। বাংলাদেশ এখন অনেকের কাছেই ‘উন্নয়নের বিস্ময়,’ উন্নয়নশীল এক দেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, পিকেএসএফ’কে ক্ষুদ্রঋণের গন্ডি থেকে বের করে এনে সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছে তাঁর সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে পিকেএসএফ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে দেশে-বিদেশে একটি শীর্ষ স্থানীয় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এক কোটি চল্লিশ লাখ দরিদ্র ও নিম্নআয়ের পরিবারকে পিকেএসএফ বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ফাউন্ডেশন দেশের ২০২টি ইউনিয়নে ‘সমৃদ্ধি’ নামক কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষাসহ জীবন ও জীবিকা-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সমন্বিত করে একটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বয়স্ক মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে বাস্তবায়ন করছে ‘প্রবীণ কর্মসূচি’।
এছাড়াও, পিকেএসএফ দেশের কৃষি খাতে আর্থিক পরিসেবার পাশাপাশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজার সংযোগসহ কৃষির বিভিন্ন উপখাতের ভ্যালু চেইন ও দক্ষ উদ্যোক্তা উন্নয়নে কাজ করার মাধ্যমে দেশের অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য পিকেএসএফ’র সংশ্লিষ্টদের কাজ করার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা এবং দরিদ্র মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও পিকেএসএফ’ তার কর্মকান্ড সম্প্রসারিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দেশের শিল্পায়ন এবং জনগণের কর্মসংস্থানের জন্য সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কৃষি জমি যেন রক্ষা পায় এবং যত্রতত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে দুই বা তিন ফসলী জমির যেন ক্ষতি সাধন করতে না পারে এবং বিনিয়োগ আসে সেজন্যই এই অঞ্চল প্রতিষ্ঠা।’
তিনি বলেন, ‘ভূমি ব্যবহারের জন্য সরকার নীতিমালা করে দিয়েছে। দুই বা তিন ফসলী জমি কেউ নষ্ট করতে পারবে না। কেউ এ ধরনের জমি নষ্ট করলে তারা সরকার প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হবে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৬০৫/শআ