বাসস সংসদ-৯ : গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত

235

বাসস সংসদ-৯
প্রস্তাব-আলোচনা
গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত
সংসদ ভবন, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রেক্ষাপটে গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রস্তাব আজ সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধিতে সরকারি দলের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
সরকারি দলের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রস্তাবটি অত্যন্ত বাস্তব সম্মত। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের ৪ কোটির উপর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উপকূলীয় ১০টি জেলা পানির নিচে ডুবে যেতে পারে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এজন্য বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী এজন্য পুরস্কৃত হয়েছেন। প্রস্তাবটি গ্রহণ করে বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তিনি আহবান জানান।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এদেশের উপকূলে ১০টি জেলার মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকে। ইউনিসেফের হিসাব মতে ১ কোটিরও বেশি শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তি ভঙ্গ করে উন্নত দেশগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, এটি তাদের বুঝাতে হবে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘে এ বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে, বাংলাদেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ কর্তৃক ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দীন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, সংসদে এই প্রস্তাবটি পাস হলে সংসদের মর্যাদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং দায়িত্বশীল সংসদ হিসেবে আবারো দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার সোলার প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে কার্বন নিঃস্বরন কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ঢাকা শহরের আশপাশের ইট ভাটা যে পরিমান কার্বন নিঃস্বরন করে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তার ১শ’ ভাগের ১০ ভাগও করছে না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য সংসদ সদস্যরা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যান্য দেশগুলোকে সাথে নিয়ে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বুঝাতে হবে।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা দায়ী, ওইসব দেশকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পরিবেশ দুষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে মানব সভ্যতার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে যেতে হবে।
সরকারি দলের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশ জরবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। নিজস্ব অর্থ দিয়ে এই সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এই সমস্যার জন্য দায়ী, অথচ এটি সমাধানে তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উন্নত দেশগুলো তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলেও বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে, কার্বন নিঃস্বরণ ৫ শতাংশ কামাবে, সহযোগিতা পেয়ে আরো ১০ শতাংশ কমাবে।
তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রেখে যেতে তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে, জীব বৈচিত্র রক্ষা করতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা করা অতীব প্রয়োজন।
উন্নত দেশের যুব সমাজ জেগে উঠেছে, আমাদের যুব সমাজেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।
সরকারি দলের সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম, কাজী নাবিল আহমেদ, ওয়াসিকা আয়শা খান, নজরুল ইসলাম বাবু, জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, মুজিবুল হক, জাসদের সদস্য শিরিন আখতার, বিএনপির সদস্য হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।
কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধিতে সংসদে আনীত প্রস্তাবটি হলো-“সংসদের অভিমত এই যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্তিত্বের সংকট, উপর্যুপরি দুর্যোগের ভয়াবহআঘাত এবং চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার বৃদ্ধি, জীববৈচিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা, ক্রমবর্ধমান পানি সংকট, মহাসাগরগুলোর উপর অভাবনীয় চাপ এবং সম্পদের অমিতাচরী ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে গ্রহজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হোক।”
বাসস/এমএসএইচ/২১৪৫/-অমি