বাসস ক্রীড়া-৫ : হতাশার মাঝেও ভালো করার প্রত্যাশায় টেস্ট সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ

118

বাসস ক্রীড়া-৫
ক্রিকেট-ইন্দোর টেস্ট
হতাশার মাঝেও ভালো করার প্রত্যাশায় টেস্ট সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ
ইন্দোর, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : দেশের মাটিতে টেস্ট ফরম্যাটে অবিশ্বাস্য এক ভয়ংকর দলে পরিণত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। এমন শক্তিশালী দলের বিপক্ষে আগামীকাল থেকে টেস্ট সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে সফরকারী বাংলাদেশ। আগামীকাল ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি।
এই টেস্ট দিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে পথ চলা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। তবে শুরুতেই প্রতিপক্ষ হিসেবে এই মুহূর্তে ভারতের চেয়ে কঠিন কোন দল হতে পারে না। গত কয়েক বছর ধরে ভারতের বিপক্ষে তাদেরই কন্ডিশনে খেলাটা অনেক বেশি কঠিন। স্পিনারদের সাথে ভারতীয় পেসারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্স যেকোন প্রতিপক্ষের জন্য বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টি-২০ সিরিজ দিয়ে ভারত সফর শুরু করে বাংলাদেশ। দিল্লিতে সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচেই জয় তুলে নেয় টাইগাররা। যা সিরিজ শুরুর আগেও চিন্তা করেনি ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। এক অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের মাটিতে পা রেখে দুর্দান্ত এক জয়ের স্বাদ নিয়েছিলো বাংলাদেশ।
সফর শুরুর আগেই দলের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকে হারায় বাংলাদেশ। জুয়াড়ির তথ্য গোপন করার অভিযোগে ক্রিকেটের প্রধান সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। পরে নিজের ভুল স্বীকার করে এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব। নিষোধজ্ঞার আগে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবীতে সাকিবের নেতৃত্বে ধর্মঘটও করে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটাররা।
তবে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়টি ছিলো স্বস্তির। যদিও শেষ পর্যন্ত সিরিজ হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারের স্বাদ নেয় মাহমুদুল্লাহ’র দল। শেষ টি-২০ ম্যাচে জয়ের ভালো সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ।
যদিও টেস্ট ক্রিকেট হলো একেবারেই ভিন্ন ধরনের প্ল্যাটফর্ম। গত ১০ নভেম্বর টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত ১১৫ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১৩টিতে জয়, ৮৬ ম্যাচে পরাজয় ও ১৬টিতে ড্র করেছে টিম বাংলাদেশ। ড্র হওয়া বেশির ভাগই বৃষ্টির হাত ধরে এসেছে। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ৯ টেস্ট খেলে ৭টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। দু’টি ম্যাচ ড্র হয়েছে বৃষ্টির দাপটে।
পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে কতটা দুর্বল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটের নতুন সদস্য আফগানিস্তানের কাছে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা। দেশের মাটিতে ঐ টেস্টে ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে হারে সাকিবের নেতৃত্বাধীন দলটি। অন্যদিকে দেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হোয়াইটওয়াশ করে ভারত। এরমধ্যে শেষ দু’টি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় টিম ইন্ডিয়া। অতীতে ভারতের মাটিতে খেলতে গেলে স্পিনারদের নিয়ে শংকিত থাকতো প্রতিপক্ষ। তবে এখন স্পিনারদের চাইতে অনেক বেশি ভয়ংকর ভারতের পেসাররা।
বাংলাদেশ-ভারতের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স নিয়ে পর্যালোচনা করলেও ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতের সেরা তিন ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি ২৬টি, আজিঙ্কা রাহানের ১১টি ও চেতশ্বর পূজারার ১৮টি। সেঞ্চুরির দিক দিয়ে এদের কাউকে স্পর্শ করতে পারেনি বাংলাদেশের এই স্কোয়াডের খেলোয়াড়রা। সর্বোচ্চ ৮টি সেঞ্চুরি রয়েছে এই সিরিজে সাকিবের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব পাওয়া মোমিনুল হকের। দলের জন্য মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ খেলোয়াড়। কিন্তু বড় ফরম্যাটের জন্য খুব বেশি ধারালো নয় তারা। ভারতের বোলিং ইউনিট ৮ শতাধিকেরও বেশি উইকেট শিকার রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বোলার মুস্তাফিজুর রহমান খেলেছেন মাত্র ১৩টি টেস্ট।
সাম্প্রতিক ফর্ম ও অভিজ্ঞতার বিচারে ভারতের চেয়ে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ। তাই ভারতের বিপক্ষে ভালো ফল পাবার স্বপ্ন কেউই দেখবে না। তবে একটি বিষয় বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে, সেটি হলো- আনপ্রেডিক্টেবিলিটি। যা টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে করে দেখিয়েছে টাইগাররা। দিল্লিতে প্রথম ম্যাচ জিতে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, ‘টি-২০ সিরিজে ভারতের কন্ডিশনে কেউই ভাবেনি আমরা কোন ম্যাচ জিতবো। কিন্তু নিজেদের সামর্থ্যের উপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। পরিস্থিতি যাই-হোক না কেন, মাঠে নেমে আমরা জয়ের জন্যই চেষ্টা করি। কখনো সম্ভব হয়, আবার কখনো সম্ভব হয়না।’
ম্যাচ নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনায়, সেশন বাই সেশন খেলার দিকেই বেশি মনোযোগি হবে বাংলাদেশ। যাতে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা সম্ভব হয়। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে এখনও অপরাজিত ভারত। ২৪০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে তারা। টেবিলে নিজেদের অবস্থানকে আরও সুংসহত করতে বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছে না ভারত। কারন চ্যাম্পিয়নশীপে প্রত্যকটি পয়েন্টই গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ জয় এসেছিলো ধীর গতি ও স্পিন সহায়ক পিচে। তবে ইন্দোরে স্পোর্টিং উইকেট পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইন্দোরের কিউরেটর সামান্দার সিং চৌহান জানিয়েছেন, পিচ থেকে বাউন্স পাবে পেসাররা। এমনকি স্পিনাররাও ভালো সুবিধা পাবে। আর এমন পিচেই বাংলাদেশের দুর্বলতা ফুটে উঠে। তারপরও ভালো কিছুর প্রত্যাশায় রয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : মোমিনুল হক (অধিনায়ক), আবু জায়েদ, আল-আমিন হোসেন, এবাদত হোসেন, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, নাঈম হাসান, সাইফ হাসান, সাদমান ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।
ভারত দল : বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), মায়াঙ্ক আগারওয়াল, রবীন্দ্র জাদেজা, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সামি, ঋসভ পান্থ, চেতশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে, ঋদ্ধিমান সাহা, ইশান্ত শর্মা, রোহিত শর্মা, সুবমান গিল, হানুমা বিহারি ও উমেশ যাদব।
বাসস/এএমটি/১৬৪৫/নীহা