হতাশার মধ্যেও আশার আলো নাঈম শেখ

345

নাগপুর, ১১ নভেম্বর ২০১৯ (বাসস) : সদ্য শেষ হওয়া ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ দলের উদীয়মান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তিন ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৪৩ রান নিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ সংগ্রহাক হয়েছেন তিনি।
এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক ঘটেছে ২০ বছর বয়সি এ টাইগার ক্রিকেটারের। অভিষেকেই সিরিজের সর্বোচ্চ রান করার বিষয়টি নিজেই ভাবতে পারেননি নাইম। বিশেষ করে যে সিরিজে অংশ নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল, শিখর ধাওয়ান সহ বাংলাদেশ দলের সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের মত তারকারা। দেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের যে অপার সম্ভাবনা মেধাবী এই ক্রিকেটারের মধ্যে লুকিয়ে আছে সেটি বাংলাদেশীদেরও সেভাবে জানা ছিল না।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ২৮ বলে ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন নাঈম শেখ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৩ বলে ৩৬ রান সংগ্রহ করেন তিনি। আর সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় ম্যাচে ৪৮ বলে ৮১ রান করে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের স্বপ্নই দেখাতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান হ্যাট্রিকম্যান স্বাগতিক বোলার দীপক চাহার। যিনি ৭ বলে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তবে ইতোমধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছেন নাঈম শেখ।
ধারাবাহিক ব্যাটিং দিয়ে নাঈমের পারফর্মেন্সের ধারাবাহিক উন্নতির এই গ্রাফই বলে দিচ্ছে এতদিন এই বিষয়টিরই ঘাটতি ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগে। আর এটিই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে তৃপ্ত করছে।
শীর্ষ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতির কারণে এই সিরিজে বাংলাদেশ বেশ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড়কে নিয়মিত খেলার সুযোগ দিয়েছিল। এদের মধ্যেই একজন হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন নাঈম। আর সুযোগ পেয়ে নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও অল রাউন্ডার আফিফ হোসেনও। তবে নাইমের মধ্যে ছিল ধারাবাহিকতা। যেটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন।
নাইমের ব্যাটিং সবাইকে মুগ্ধ করেছে। যা দেখে অনেক সাবেকরাই বলেছেন, ‘বাহ দারুণ’। ম্যাচ চলাকালে ধারাভাষ্য দেয়ার সময় সুনিল গাভাস্কার ও আতাহার আলী খানদের মত সাবেক তারকাদের মুখ থেকেও নাইমের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা ঝড়ে পড়তে থাকে। বলেন,‘ বাহ! কি দারুণ শট।’ সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক ভারতীয় দাপুটে বোলিংয়ের সামনেই ৪৮ বলের মোকাবেলায় খেলেছেন ৮১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মামুদুল্লাহ রিয়াদ নাঈমের ইনিংস প্রসঙ্গে বলেন, ‘তার ইনিংসটি ছিল মনোমুগ্ধকর। কিন্তু তার ওই অসাধারণ ইনিংসের পরও ম্যাচ জয় করতে না পারাটা খুবই হতাশার। এমন একটি ইনিংসকে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতার দায় আমাদের।’
বয়স ভিত্তিক ম্যাচে খেলানোর সুযোগ দিয়ে ম্যানেজমেন্ট যতœ সহকারে যেসব ক্রিকেটার তৈরী করছে তাদেরই একজন নাঈম শেখ। তবে অন্যদের পথে না হেঁটে নাঈম এর প্রতিদান দেয়াদের একজন হতে চলেছেন।
জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, ‘নাঈম শেখের রান করার ধরনটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক। গত দুই বছর ধরে তাকে গড়ে তোলা হচ্ছে। সে হাই পারফর্মেন্সে স্কোয়াডেও ছিল। মেধাবী ক্রিকেটারদের নিয়ে যেটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে সবাই পারফর্মার হতে পারেনি। নাঈম নিজেকে ভাল পারফর্মার হিসেবে গড়ে তুলতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচে সে বড় স্কোর গড়তে পারেনি। কিন্তু শেষ ম্যাচে সে বড় স্কোর করেছে। যার মাধ্যমে সে প্রমাণ করেছে বড় ইনিংস খেলার যোগ্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত রান সংগ্রহ করতে পারা কঠিন। তবে খুব বেশী ঘাম না ঝরিয়েই সে সেটি করতে সক্ষম হয়েছে।’
বাশার বলেন, কঠোর পরিশ্রমই নাঈমকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাল করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, ‘সে যখন হাই পারফর্মেন্স ইউনিটে ছিল, তখন তার কৌশল খুব একটা ভাল ছিল না। কিন্তু সে ওই বাঁধাকে টপকাতে সক্ষম হয়েছে কেবল মাত্র কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। যে কারণে আমরা তাকে আস্থায় রাখতে পারছি।’