বাসস দেশ-৩৩ : চট্টগ্রামে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে উপকূলবাসী : ২৮৪ মেডিকেল টিম প্রস্তুত

217

বাসস দেশ-৩৩
আশ্রয় কেন্দ্রে-উপকূল
চট্টগ্রামে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে উপকূলবাসী : ২৮৪ মেডিকেল টিম প্রস্তুত
চট্টগ্রাম, ৯ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। প্রস্তুত সাড়ে চার হাজার আশ্রয় কেন্দ্র। এতে প্রায় ৮ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা ও উপজেলার প্রত্যেক হাসপাতালে জরুরি বিভাগ খোলা রাখা হয়েছে।
শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়। এর পরপরই উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে সরাতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রেডক্রিসেন্ট একযোগে জেলা ও নগরের উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং কার্যক্রম চালায়।
মূলত ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে শনিবার দুপুরে এমন খবরের পর বিকেল থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে শুরু করেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি জেলার উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সি-বিচ এলাকার ব্যবসায়ী বাসিন্দা ফোরকান বলেন, ‘গত রোয়ানু ঘূর্ণীঝড়ের সময়ে সী-বিচ এলাকায় প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাই এখানকার প্রায় ব্যবসায়ী গতকাল থেকে নিরাপদ জায়গায় মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন।’
কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা মো. জমিস উদ্দিন বাসস’কে বলেন, ‘বেড়িবাঁধ এলাকায় বেশির ভাগ লোককে নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছেন। অনেকেই আশপাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।’
নগরীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালে আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে সিটি করেপারেশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় ও নদী উপকূলীয় এলাকার ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া মাইকিং ও প্রচারণার কাজ করছেন। ওয়ার্ডে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খোলা রয়েছে।’
সাবেক কাউন্সিলর আবদুল বারেক বলেন, ‘সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিতে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও স্বেচ্ছসেবকদের দিয়ে মাইকিং করেছি। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের লোকজনও কাজ করছেন। সকাল থেকে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলকার বেশির ভাগ মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।’
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, আকমল আলী বেড়িবাঁধ, কাট্টলী, সন্ধীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুন্ড ও মিরসরাই উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা শনিবার বিকেল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাসস’কে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে ২৮৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ উপজেলায় ৫টি করে ৭০টি, ২০০ ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২০০টি, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি এবং নগরে আরও ৯টি আরবান ডিসপেনসারি টিম গঠন করে তাদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, জেলায় ৪৭৯টি স্থায়ী সাইক্লোন সেল্টার এবং প্রায় চার হাজার স্কুল-কলেজের পাকা ভবন উপকূলের বাসিন্দাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ২৮টি ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রিজার্ভ ও ভলান্টিয়ারসহ ১০টি রেসকিউ গাড়ি উপকূলে পাঠানো হয়েছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে সরানোর চেষ্টা করছে।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অধিদফতরের বরাদ্দকৃত ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, ৩৪৯ মেট্রিক টন জিআর চাল, ৬৮১ বান্ডেল ঢেউটিন, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০০ তাবু প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরীসহ আশেপাশের এলাকায় মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুপুরের পর থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। নগরীতে যানবাহন চলাচল কমে গেছে।
বাসস/জিই/এমএন/১৯৫০/অমি