বাসস দেশ-৩০ : ভারতের রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিরোধ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রদান

114

বাসস দেশ-৩০
ভারত-বাবরি মসজিদ-রায়
ভারতের রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিরোধ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রদান
॥ আমিনুল ইসলাম মির্জা ॥
নয়াদিল্লী, ৯ নভেম্বর, ২০১৯ (বাসস) : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শনিবার রামের জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ ভূমি বিরোধ মামলার রায় প্রদান করেছে। এতে ২ দশমিক ৭৭ একর জমিতে মন্দির নির্মাণের জন্য আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এই ইস্যুকে নিয়ে কয়েক দশক ধরে চলা অনিশ্চয়তার সমাপ্তি ঘটল।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি ‘উপযুক্ত’ স্থানে ৫ একর জমি দেয়ার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে। বেঞ্চটি রাম লীলার কাছে বিরোধপূর্ণ ২ দশমিক ৭৭ একর জমিটি হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে।
সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহি আখড়া ও রাম লিলার মধ্যে মামলাটি চলছিল।
বেঞ্চটির অন্যান্য বিচারকগণ হলেন- এলাহাবাদ উচ্চ আদালতের বিচারক এস এ বোবদে, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস এ নাজির। মামলাটির ৪০ দিনের দীর্ঘ শুনানী ১৬ অক্টোবর শেষ হয়েছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রায় বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত স্থানটি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
যদিও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, এই রায়টিতে প্রচুর স্ববিরোধিতা রয়েছে। বোর্ডের আইনজীবী জাফরিয়াব জিলানী বলেন, তারা এই রায়ের পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবেন।
রায়কে কেন্দ্র করে শান্ত থাকার জন্য শীর্ষ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক নেতারা সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও দুষ্কৃতিকারীরা যেন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়কে উস্কানি ও তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াতে না পারে সে জন্য দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমস রায়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, কেন্দ্রকে ট্রাস্ট গঠনের জন্য তিন মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়েছে মসজিদটি ফাঁকা জমির উপর নির্মিত হয়নি। আর্কেলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) জানায়, বাবরি মসজিদটি একটি মন্দিরের উপর নির্মিত হয়েছিল।
তবে রায়ে জোর দিয়ে বলা হয় যে, এএসআই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি যে মসজিদটি নির্মাণের জন্য মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়েছিল কিনা।
বিচারক গাগৈ বলেন, ‘মুসলিমরাই ওই স্থানটির মালিক এমন কোন প্রমাণ নেই।’
গণমাধ্যমে বলা হয়, এই রায়কে কেন্দ্র করে মামলার পাঁচ বিচারকের বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ইয়োগি আদিত্যনাথ ও কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও এই ইস্যুতে কোন ধরনের উস্কানিমূলক বিবৃতি প্রদান না করার জন্য দলীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, রায়ের সময়ে উত্তর প্রদেশে ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এতে কোন স্থানে তিন জনের বেশি লোক জমায়েত হতে পারবে না।
সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মন্দির-বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের কারণে শনিবার উত্তর প্রদেশ, দিল্লী, মধ্যপ্রদেশ, জম্মু ও কর্নাটকের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।
হিন্দুদের একটি অংশ মনে করেন যে বিরোধীপূর্ণ স্থানটি হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থান এবং সেখানে একটি মন্দির ছিল। ১৬শ শতকে মুঘল স¤্রাট বাবরের শাসন আমলে মন্দিরটি ধ্বংস করে সেখানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, উগ্রপন্থী হিন্দুরা বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তুপের উপর রাম মন্দির নির্মাণের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে।
বাসস/এআইএম/অনু-কেএআর/১৮৫২/আরজি