বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (তৃতীয় ও শেষ কিস্তি) : মানব কল্যাণে বীমা শিল্পের ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

118

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (তৃতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বীমা-সম্মেলন
মানব কল্যাণে বীমা শিল্পের ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

অন্তর্ভুক্তিমূলক বীমা নিশ্চিতের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে তাঁর সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা অনুযায়ী প্রাকৃতিক ঝুঁকিপ্রবণ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার হাওড় অঞ্চলে আকষ্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের আর্থিক ক্ষতি নিরসনের জন্য ‘কৃষি বীমা’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ‘প্রবাসী কর্মী বীমা নীতিমালা’ জারি করা হয়েছে। এতে প্রায় ১২ মিলিয়ন কর্মীর বীমা ঝুঁঁকি গ্রহণ সম্ভব হবে। এ বীমার আওতায় একজন প্রবাসী কর্মী সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকার বীমা সুবিধা পাবেন,বলেন তিনি।
বীমা দাবি নিষ্পত্তি বীমা শিল্পের একটি পুঞ্জিভূত সমস্যা উল্লেখ করে এ সমস্যা থেকে বীমা শিল্পকে বের করে আনা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ‘বীমা শিল্পে বিগত ২ বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বীমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দাবি নিষ্পত্তিতে কর্তৃপক্ষের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় থাকায় দাবি নিষ্পত্তির হার পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে বীমা মেলার আয়োজন, উন্নয়ন মেলায় বীমা কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং ইতোমধ্যে দেশের কয়েকটি বিভাগীয় শহরে জনসচেতনতা বাড়োনোর উদ্দ্যেশ্যে দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, উঁচু ভবনে অগ্নিকা- থেকে সৃষ্ট ঝুঁঁকির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভবন বীমা প্রচলন এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে সকল কোম্পানি এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি এমন ২৭টি বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীমা শিল্পে লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার জন্য ১০ হাজার টাকার উর্ধ্বে সকল লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদনের নির্দেশনা জারি এবং সকল বীমা কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট হালনাগাদ করে অনিষ্পন্ন বীমা দাবির তালিকা প্রদর্শন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সেইসাথে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, জীবন বীমা কর্পোরেশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন ও মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যক্রম ২০১৮ সাল থেকে চলমান রয়েছে,বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতা-মাতার অবর্তমানে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ প্রবর্তনের কাজ চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সে আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে যোগদানের তারিখ ১লা মার্চকে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন রয়েছে,জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞগণ পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ভূমিকা রাখবেন যা মূলত অন্তর্ভুক্তিমূলক বীমার মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও ফলপ্রসু এবং বাস্তবমুখী কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করবে।’ বীমাশিল্পের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বীমা শিল্পের উন্নয়নে জাতির পিতা গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা বেশ পুরানো। আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বীমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’
‘এজন্য স্বাধীনতার পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে তিনি বীমাশিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন বীমাশিল্পের জন্য এ্যাকচুয়ারির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে দেশের একমাত্র এ্যাকচুয়ারি শাফাত আহমেদ চৌধুরীকে লন্ডন থেকে দেশে ডেকে আনেন এবং কন্ট্রোলার অব ইন্সুরেন্স পদে নিয়োগ দান করেন।
‘ব্যক্তি, পরিবার এবং প্রাতিষ্ঠানিক খাতের অদৃশ্য ঝুঁকি হ্রাসে বীমাশিল্প সহায়তা করে’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ খাতের জন্য তহবিল সৃষ্টিতে সহায়তা করে।’
‘কাজেই ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য বীমা প্রয়োজন,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৩৮ সালে প্রণীত বীমা আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার ‘বীমা আইন ২০১০’ চালু করেছে এবং পূর্বের কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স অধিদপ্তর অবলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা আইডিআরএ আইন ২০১০ প্রণয়ন করেছে।
তাঁর সরকারের দারিদ্র হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পেছনে বীমা খাতের অবদান রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বীমা খাত সমাজের সকল শ্রেনির মানুষের নিকট থেকে সঞ্চয় সংগ্রহের মাধ্যমে বিনিয়োগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্র তৈরি হয় এবং দারিদ্র্যে দূর হয়।’
‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে (এসডিজি) অর্থনৈতিক কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে উল্লেখ করে এর মাধ্যমে দেশের নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীর উন্নতি সাধন সম্ভব হবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৯১৮/কেএমকে