রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসা স্ক্লেরোডার্মা কমিয়ে আনতে পারে

417

ঢাকা, ৩০ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : স্ক্লেরোডার্মা এক ধরনের বাতরোগ। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এ রোগ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে আক্রান্তরা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকেন। সঠিক সময়ে এ রোগের নির্ণয় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা রোগীদের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে পারে।
আজ শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে “বিশ্ব স্ক্লেরোডার্মা দিবস” উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
তারা বলেন, দীর্ঘমেয়াদী স্ক্লেরোডার্মা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি রোগ। এই রোগের সঠিক কোন কারণ জানা যায়নি। আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, যা নিজ থেকেই শরীরকে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
বিএসএমএমইউয়ের রিউমাটোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব স্ক্লেরোডার্মা দিবস উপলক্ষে আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি র‌্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে। পরে, রোগীদের সাথে এক সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
উল্লেখ্য, স্ক্লেরোডার্মা রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো- শুরুতে হাত ও পায়ের পাতা এবং উপরের তালুসহ আঙ্গুলসমূহ ফুলে যায়, চামড়া ধীরে ধীরে মোটা এবং শক্ত হওয়া শুরু করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি হাতের কনুই এবং পায়ের হাঁটু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে এটি কনুই ও হাঁটুর উপরিভাগসহ মুখমন্ডল, বুক এবং পিঠের চামড়া আক্রান্ত করতে পারে। পরবর্তীতে আঙ্গুলের মাথাগুলো চিকন হয়ে যেতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের মাথায় ঘাও হতে পারে।
এ রোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা মানসিক বিষন্নতায় হাতের আঙ্গুল নীল এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বকের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করতে পারে, যেমন: ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, কীডনি, অন্ত্র ইত্যাদি। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বক আক্রমণ না করেও ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করতে পারে। এ রোগে গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হতে পারে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে রোগীরা সাধারণত অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠেন, সেই সাথে খুসখুসে কাশিও হতে পারে। খাদ্যনালী এবং পাকস্থলি আক্রান্ত হলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে, গলায় খাবার উঠে আসতে পারে, শ্বাসকষ্ট হওয়া এবং কিডনিজনিত সমস্যার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াও এই রোগের উপসর্গ।
মানুষের শরীরে ছয় শতাধিক বাতরোগ হতে পারে, স্ক্লেরোডার্মা এদের মধ্যে অন্যতম। তবে ত্বকের পাশাপাশি এ রোগে শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে, যদি শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়, তাহলে তাকে সিস্টেমিক স্ক্লেরোডার্মা বলে।
অধ্যাপক ডা. মুজিবর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন,উপ-উপাচার্য ডা. মো: শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো: শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আজগর মোড়ল।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতালির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মাউরিজিও কাটোলো এবং বেলজিয়ামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ভেনেসা স্মিথ ।
বিএসএমএমইউয়ে রিউমাটোলজি বিভাগ প্রতি বুধবার স্ক্লেরোডার্মা ক্লিনিকের ব্যবস্থা করে থাকে, যেখানে স্ক্লেরোডার্মা রোগীদের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।