বাজিস-৫ : বাকৃবির বিজ্ঞানীদের নতুন উদ্ভাবন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক ‘বাউ ধান-৩’

150

বাজিস-৫
ময়মনসিংহ- বাউ ধান -৩
বাকৃবির বিজ্ঞানীদের নতুন উদ্ভাবন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক ‘বাউ ধান-৩’
ময়মনসিংহ, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস): বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা নতুন জাতের ‘বাউ ধান-৩’ উদ্ভাবন করেছেন। এটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক একটি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত। বাকৃবি’র উপাচার্য কৃষি অনুষদের কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. লুৎফুল হাসানের নেতৃত্বে তরুণ বিজ্ঞানীদের একটি দল দীর্ঘ গবেষণায় এ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাউ ধান-৩ সারা দেশে মাঠ পর্যায়ের চাষীদের মাঝে পৌছে দেওয়া হলে এটি আবাদে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, কৃষিতেও তেমনি এক অনন্য পরিবর্তন ঘটবে।
বাকৃবির সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, ২০১৫ সালে ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) থেকে আনা হয় ধানের কৌলিক সারি। বাকৃবি’র উপাচার্য ওই ধানের কৌলিক সারি নিয়ে ব্লাস্ট প্রতিরোধ নতুন ধান উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন বাকৃবি’র সাবেক খামার তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান খান, কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল হক, একই বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আরিফ হাসান খান রবিনসহ একদল তরুণ বিজ্ঞানী।
প্রাথমিক পর্যায়ে বাকৃবির অভ্যন্তরীন গবেষণাগারে কাজ শুরু হলেও পরে ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বোরো মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লট আকারে পরীক্ষামূলকভাবে মাঠ পর্যায়ে চাষ করা হয়। নতুন জাতের এ ধান ব্লাস্ট প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও অধিক উৎপাদনশীল। গুণগত মান ও উৎপাদনশীলতা বিবেচনায় রেখে চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় বীজ বোর্ডের শততম সভায় নতুন উদ্ভাবিত বাউ ধান-৩ অনুমোদন লাভ করে।
এ ব্যাপারে বাকৃবি’র উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. লুৎফুল হাসান জানান, কৃষকদের কাছে ধান উৎপাদনে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ব্লাস্ট রোগ। এ রোগের কারণে ধানের ফলন দিন দিন কমে আসছিল। বিশেষ করে কৃষকের জনপ্রিয় ব্রি ধান-২৮ চাষাবাদে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল ব্লাস্ট রোগ।
তিনি আরও জানান, কৃষি এবং কৃষকের কথা মাথায় রেখে ব্রি-২৮ এর বিকল্প হিসেবে ব্লাস্ট প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন বাউ ধান-৩ উদ্ভাবনে তারা গবেষণা শুরু করেন। বাউ ধান-৩ এ ব্লাস্টসহ অন্যান্য রোগবালাই কম হওয়ায় এটি কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হবে। এছাড়া এ ধান বোরো ও আমন মৌসুমে আগাম জাত হিসেবে রোপণ করা যাবে। বাউ ধান-৩ প্রচলিত ব্রি-২৮ এর চেয়েও হেক্টরপ্রতি এক টন বেশি উৎপাদন হবে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া কৌলিতত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আরিফ হাসান খান রবিন জানান, বাউ ধান-৩ প্রচলিত ব্রি-২৮ ধানের চেয়ে বেশি শক্ত ও মজবুত হওয়ায় হেলে পড়ে না এবং শীষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। এ ধান চাষে দেশের কৃষকরা লাভবান হবে বলে তিনি জানান।
কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আশরাফুল হক জানান, চাষাবাদে বাউ ধান-৩ এর জীবনকাল ব্রি-২৮ এর মতোই ১৪০-১৪৫ দিন। এ ধানের ভাতও সুস্বাদু। এছাড়া আগাম জাত হিসেবে বাউ ধান-৩ বোরোর মতো আমনেও চাষাবাদ করতে পারবেন কৃষকরা।
কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. জহির উদ্দিন বলেন, ‘বাকৃবি’র গবেষকদের উদ্ভাবিত নতুন জাতের বাউ ধান-৩ সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটবে। তিনি এ ধানের জাত সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।’
বাসস/সংবাদদাতা/১৩১৫/নূসী