খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আদালতের : তথ্যমন্ত্রী

383

চট্টগ্রাম, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯ (বাসস) : তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেন,বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আদালতের, সরকারের নয়। তিনি বলেন, ‘দু’সপ্তাহ ধরে কোন চিকিৎসক খালেদা জিয়াকে দেখতে যাননি’ বলে স্বজনরা তার (বেগম জিয়ার) সাথে দেখা করে আসার পর যে অভিযোগ তুলেছেন তা সঠিক নয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছেনা বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আসলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য এবং খালেদা জিয়ার বোনসহ আত্মীয় স্বজনরা দেখা করে এসে যা বলছেন তার মধ্যে কোন ফারাক নেই বরং তাদের বক্তব্যের পুরোপুরি মিল রয়েছে। এসব বলে তারা খালেদা জিয়ার জন্য সহানুভুতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। এটি করতে গিয়ে বিএনপি নেতারা প্রকারান্তরে বেগম জিয়াকেই অসম্মানিত করছেন। ড. হাছান আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড়ে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে প্রথমত তাকে জামিন পেতে হবে। জামিন পাওয়ার পর বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে পারবে কিনা সেব্যাপারেও আদালতের অনুমতি লাগবে। তিনি বলেন, এটি আদালতের ব্যাপার। তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাবেন কি পাবেন না সেটা সরকারের নয়, আদালতের ব্যাপার।
আদালত যদি তাকে জামিন দেন এবং বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার অনুমতি দেন তাহলেই বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার প্রসঙ্গটি আসে। এটা সম্পুর্ণ আদালতের এখতিয়ার।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া সবসময়ই কর্তব্যরত চিকিৎসকের নিয়মিত চেকআপে রয়েছেন। এছাড়াও সিনিয়র ডাক্তাররা তাকে এক-দু’দিন পরপর দেখতে যান এবং তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।’
তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা জানেন খালেদা জিয়ার আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দীর্ঘদিনের পূরনো সমস্যা। এগুলো নতুন সমস্যা নয়। এসমস্যা নিয়েই তিনি দু’বার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির মতো একটি বড় দলের চেয়ারপার্সনেরও দায়িত্ব পালন করছেন। বিরোধী দলের নেতার দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের বয়স বাড়লে সব মানুষের আর্থ্রাইটিসের মতো নানা সমস্যা হয়। তার নতুন করে কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। আত্মীয়-স্বজনরা শুক্রবার দেখা করে এসে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো নতুন কোন সমস্যা নয় পুরনো সমস্যা। তারা যেসব কথা বলেছেন তাও সঠিক নয়। তাকে নিয়মিত চেকআপে রাখা হয়েছে, সিনিয়র ডাক্তাররা দুয়েকদিন পরপর দেখতে যাচ্ছেন।
দেশের মেডিকেল শিক্ষার সর্ব্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে দেশের প্রতিথযশা ডাক্তাররা সংযুক্ত রয়েছেন এ কথা উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে মানসম্মত চিকিৎসা হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তখন সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দেবী শেঠিসহ বিখ্যাত ডাক্তারররা এসেছিলেন, তারা বলেছিলেন ভারত ও সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেলে তাকে যে চিকিৎসা দেয়া হতো বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে সেই চিকিৎসায় দেওয়া হয়েছে। যে কারণে তিনি মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসেন। এখানেই ভালো চিকিৎসা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার সুচিকিৎসার জন্য সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। দেশে আরো অনেক হাসপাতাল ছিল, তিনি যাতে ভালো চিকিৎসা পান সেজন্যই দেশের সেরা হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে তাকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে যদি খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় না হয় তাহলে তাকে যখন কারাগারে ফেরত নেয়ার কথা আসে তখন রিজভী আহমেদরা বিরোধিতা করেন কেন এমন প্রশ্ন রেখে ড. হাছান বলেন, খালেদা জিয়ার স্বজনরা জামিন প্রাপ্তিতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কী সরকার সহায়তা করবে? তারা একবার বলে আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। আবার কেউ বলছেন, তার জামিন আবেদনের সময় যাতে বিরোধীতা করা না হয়। তাদের বক্তব্যই স্ববিরোধী। সরকারের দুর্নীতির সাথে আপোষ করার কোন সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।