বাজিস-২ : ৩০ জুন হবিগঞ্জে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত হবে

193

বাজিস-২
সাঁওতাল-দিবস
৩০ জুন হবিগঞ্জে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত হবে
হবিগঞ্জ, ২৯ জুন, ২০১৮ (বাসস) : ৩০ জনু সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। এ বছর সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১৮৫৫ সালের এই দিনে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা যুদ্ধ শুরু করেছিল। প্রায় দেড় বছর যুদ্ধ শেষে তারা পরাজিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে বসবাসকারী প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে।
হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে বসবাসকারী সাঁওতালরা জানান, সাঁওতালরা অত্যন্ত সহজ-সরল। তারাই এ উপমহাদেশে পতিত জমি ও জঙ্গল পরিস্কার এবং কৃষির প্রচলন করে। ব্রিটিশ আমলে এ দেশে যে চা শিল্প গড়ে ওঠে, তা তাদের পরিশ্রমের ফসল। কিন্তু কোনো সময়ই তারা অবদানের স্বীকৃতি ও অধিকার পায়নি। সাঁওতালদের আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। তাই এই সংস্কৃতি ও ভাষা বিলীন হওয়ার পথে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে ১৬৩ বছর পূর্বে ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন তারিখে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের চার ভাই সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরোর নেতৃত্বে আদিবাসীরা বৃটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাতœক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অসৎ ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা।
ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ। বহু কষ্ট করে জঙ্গল কেটে বন সাফ করে তারা তাদের জনপদ গড়ে তুলেছিল। অতীতে যে মাটিতে কোন মানুষের পা পড়েনি, সে মাটিকে তারা বাসযোগ্য করে গড়ে তুলেছিল আর সে মাটিতে ফলিয়েছিল ধান, ভুট্টা, নানা ধরণের সবজি আর সোনালী ফসল। সুখে ছিল তারা দামিন-ই কোহতে। নিজেদের আলাদা একটি জগৎ তৈরী করেছিল তারা। সে জগতে কোন মহাজন, দালাল, জমিদার ছিল না। কেউ ঋণী ছিল না তখন। কিন্তু ব্যবসায়ী ও মহাজন শ্রেণী দলে দলে আসতে শুরু করল সাঁওতাল পরগনায়। মহাজন ও ব্যবসায়ী শ্রেণী সাঁওতাল পরগনায় ঢুকে বিপুল পরিমাণ ধান, সরিষা ও অন্যান্য তৈলবীজ গরুর গাড়ী বোঝাই করে নিয়ে যেত। বিনিময়ে সাঁওতালদের দেওয়া হতো সামান্য লবণ, টাকা-পয়সা, তামাক অথবা কাপড়। বিনিময়ের সময় চরমভাবে ঠকানো হতো সাঁওতালদের। কিছু অর্থ, কিছু চাল বা অন্য কোন দ্রব্য ঋণ দিয়ে সমস্ত জীবণের জন্য সাঁওতালদের ভাগ্য বিধাতা ও দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে বসত মহাজনরা। ফসল কাটার মৌসুম এলে মহাজন শ্রেনী গরুর গাড়ী ও ঘোড়া নিয়ে সাঁওতাল পরগনায় আসত। আসার সময় মহাজনরা একটি পাথরে সিঁদুর মাখিয়ে নিয়ে আসত এবং সাঁওতালদের বলত যে, এ পাথরের ওজন নির্ভূল। এ পাথরের সাহায্যে ওজন করে মহাজনরা সাঁওতালদের সমস্ত ফসল তুলে নিয়ে যেত। কিন্তু তারপরও আদিবাসীদের ঋণের বোঝা সামান্য হ্রাস পেত না। মহাজনদের ঋণের সুদের হার ছিল অতি উচ্চ। একজন সাঁওতালকে তার ঋণের জন্য তার জমির ফসল, লাঙ্গলের বলদ এমনকি নিজেকেও বলি দিতে হতো তার পরিবারের কাছ থেকে। আর সেই ঋণের দশগুণ পরিশোধ করলেও তা আর শোধ হতো না।
মহাজন, দালাল, জমিদার কর্তৃক নিরীহ ও সরল আদিবাসীদের শোষণ ও নির্যাতনে পরোক্ষ মদদ দিত বৃটিশ সৈন্য বাহিনী। এ কারণে আদিবাসীরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
১৮৫৫ সালের ৩০ জুন যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে তা শেষ হয়। সাওতাঁলরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেও ইংরেজ বাহিনীর হাতে ছিল বন্দুক ও কামান। তারা ঘোড়া ও হাতি যুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এ যু প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা মারা যায়। সাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা বৃটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধে সিদু-কানহু-চান্দ ও ভাইরো পর্যায়ক্রমে নিহত হলে ১৮৫৬ সালের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় এবংবিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে।
দিবসের কর্মসূচি:
৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সুরমা চা বাগানের মাহুঝিল নামক স্থানে আয়োজন করা হয়েছে দিন ব্যাপি কর্মসূচি। সকাল ১০টায় আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বাগানের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করবে। অনুষ্ঠানে চা শ্রমিক ও আদীবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
বাসস/ সংবাদদাতা/১২০৫/মরপা